Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
Sheikh Rasel,শেখ রাসেল: আবেগ, শূন্যতা ও ভালোবাসায় জড়ানো নাম!

Sheikh Rasel-শেখ রাসেল: আবেগ, শূন্যতা ও ভালোবাসায় জড়ানো নাম!

বেঁচে থাকলে ৫৭ পেরিয়ে ৫৮ বছরে পা দিতেন তিনি! পুরোদস্তর মধ্য বয়স্ক এক পুরুষের দীপ্তিতে উদ্ভাসিত হতেন। আচ্ছা, দেখতে কেমন হতেন তিনি? সেই গোঁফওয়ালা ভরাট কণ্ঠের রাশভারি চেহারা নাকি আরেকটু ভিন্ন কোন অবয়ব! তা যাই হোক, আদল দেখলে নিশ্চিত বোঝা যেত, এ আর কেউ নন, জাতির পিতারই ছায়া!

হয়তো-রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে থাকত, কারণ, দেশ পরিচালনা ও রাজনীতির সৎ রক্ত যে তার শরীরে। আবার পিতার প্রিয় বার্ট্রান্ড রাসেলের মতো পৃথিবী বিখ্যাত দার্শনিক ও বিজ্ঞানীও হতেন হয়তো। কিংবা নিজের ইচ্ছা ছিল আর্মি অফিসার হওয়ার, তাহলে জাঁদরেল সেনাবাহিনীর জেনারেলেই হতেন সুনিশ্চিত!

স্বপ্নের ভাষায় বলছি, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ‍পুত্র শেখ রাসেলের কথা। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর হেমন্তের জ্যোৎস্না-প্লাবিত রাতে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্ম যে শেখ রাসেলের, অনেক অনেক সম্ভাবনার স্বপ্নিল দোলা দিয়ে তিনি চলে গেছেন জীবনের শুরুর দিনগুলোতেই। যদি বেঁচে থাকতেন, হতেন পিতা বঙ্গবন্ধুর চেয়েও বয়সী। বয়স হত তার ৫৭, বঙ্গবন্ধুর চেয়েও কিছুটা বেশি। কারণ ৫৫ বছরেই প্রাণ দিতে হয়েছিল পিতা ও  জাতির স্থপতিকে।

বাঙালির কাছে শেখ রাসেলও বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের মতোই অন্তহীন বেদনার এক মহাকাব্য, চেতনার গভীরে চিরস্থায়ী এক তাজা ক্ষতের নাম, বুকভারি-করা এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। যখনই ১৫ আগস্টের নির্মম, নিষ্ঠুর, বর্বর হত্যাকাণ্ডের সেই কালোরাতের কথা মনে হয়, নিষ্পাপ শিশু রাসেলের মুখটিই প্রথমে ভেসে আসে রক্তরঞ্জিত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে।

হযরত মুহাম্মদ (স) এর জীবনী ও জীবন কাহিনী | Hazrat muhammad-পাঁচটি রচনা শেষ নবীর জীবনী ২০০ শব্দ, ৩০০ শব্দ,৫০০শব্দ, ১০০০ শব্দ

৪৫ বছর পরেও মনে হয়, কেন রাসেলের এমন হলো না যে, তিনিও আশ্রয়ের পরম নিরাপত্তায় বড় বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার হাত ধরে জার্মানি পাড়ি দিতে পারতেন; তা হলে তাকে আর হারাতে হত না সম্ভাবনাময় এক জীবন। অথবা ‘আমি মায়ের কাছে যাব’ শুনে নিষ্ঠুর হত্যাকারীদের যদি একটু মায়া হত; তাহলে বেঁচে যেত মায়াবি কিশোর, ক্ষত-বিক্ষত-রক্তাক্ত হতো না রাসেলের মতো এক দুরন্ত কিশোরের মুখচ্ছবি। আজও ভাবতে কষ্ট হয়- তুলতুলে নরম সুন্দর মুখখানা দেখে কখনও কারো মায়া না হয়ে পারে….! পারে না।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে রাসেল সবার ছোট। সবার চোখের মনি, ঘর আলো করা এক প্রদীপ। হাসু, জামাল, কামাল ও রেহানাসহ সবার জন্য এক আনন্দের বহমান নদী রাসেল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন পৃথিবীবিখ্যাত দার্শনিক-চিন্তাবিদ-শান্তি আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক রার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত। রাসেলের লেখা নিয়ে বেগম মুজিবের সঙ্গে আলোচনাও করতেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে শুনে শুনে বেগম মুজিবও হয়ে উঠেছিলেন রাসেলভক্ত। আর সে কারণেই হয়তো কনিষ্ঠ সন্তানের নাম রেখেছিলেন রাসেল। মনে হয়তো প্রচ্ছন্ন আশা ছিল, তাদের ছোট ছেলেটিও একদিন বার্ট্রান্ড রাসেলের মতো যশস্বী-মনস্বী হবে।

দুরন্ত রাসেলের শৈশবে সেই অমিত সম্ভাবনা দেখাও গিয়েছিল। শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে গৃহ শিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা তার প্রতিভার কথা উল্লেখ করে জানান, ‘মেধা ও মননের অপূর্ব সমাহার ছিল শিশু রাসেলের কচি মনে। তার শিশু মন ছিল মানবিকতায় ভরা। তার মনে হাজারো প্রশ্ন থাকত, সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইত।’

শেখ রাসেল একটি স্বপ্নের মৃত্যু। মানবতার প্রতীক ভালবাসার নাম আমাদের বন্ধু প্রবন্ধ রচনা

শিশু রাসেলের বেশিরভাগ সময় কেটেছে বাবাকে ছাড়াই। কারণ তার বাবা রাজনৈতিক বন্দি হয়ে কারাগারে কাটিয়েছেন জীবনের বেশিরভাগ সময়। তাই তো মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে আব্বা বলে সম্বোধন করত রাসেল। এসব নিয়ে কারাবন্দী বঙ্গবন্ধুর মনেও চাপা কষ্ট অনুভুত হত।

‘কারাগারের রোজনামচা’য় শেখ রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন ‘৮ ফেব্রুয়ারি ২ বছরের ছেলেটা এসে বলে, ‘আব্বা বালি চলো’। কী উত্তর ওকে আমি দিব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম, ও তো বোঝে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম, ‘তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো। ’ ও কি বুঝতে চায়! কি করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটা, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে! দুঃখ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলে-মেয়েরা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু রাসেল এখনো বুঝতে শিখেনি। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে।’

‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসেলকে নিয়ে গেলে ও আর আসতে চাইত না। খুবই কান্নাকাটি করত। ওকে বোঝানো হয়েছিল যে, আব্বার বাসা জেলখানা আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা বাসায় ফেরত যাব। বেশ কষ্ট করেই ওকে বাসায় ফিরিয়ে আনা হতো। আর আব্বার মনের অবস্থা কী হতো, তা আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায় আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতেন এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। মাকেই আব্বা বলে ডাকত।’

Sheikh Rasel-শেখ রাসেল
Sheikh Rasel-শেখ রাসেল

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মাত্র ১১ বছরের কচি বয়সে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে ঘাতকদের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় শেখ রাসেল। মা, বাবা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে সবার পর সবশেষে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় শেখ রাসেলকে। তার আগে সে বারবার বলেছিল, ‘মায়ের কাছে যাব’। তৃষ্ণার্ত হয়ে পানি খেতেও চেয়েছিল। মায়ের কাছে নেওয়ার নাম করেই হত্যা করা হয় শিশু রাসেলকে।পৃথিবীতে যুগে যুগে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিন্তু শিশু রাসেলের মতো এমন নির্মম, নিষ্ঠুর এবং পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড কোথাও ঘটেনি।

রাসেলকে নিয়ে ‘কারাগারের রোজনামচা’র ২৭ শে মে এবং ২৮ শে মে ১৯৬৭ সালের স্মৃতিচারণায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘রাসেল আমাকে পড়ে শোনাল, আড়াই বৎসরের ছেলে আমাকে বলছে ৬ দফা মানতে হবে- সংগ্রাম, সংগ্রাম- চলবে চলবে-পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ ভাঙা ভাঙা করে বলে কি মিষ্টি শোনায়! জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ ও শিখল কোথা থেকে। রেণু বলল, বাসায় সভা হয়েছে তখন কর্মীরা বলেছিল, তাই শিখেছে’।

শেখ রাসেলের ছিল স্বল্পায়ু জীবন। এতটুকু জীবনেই প্রাণোচ্ছল শিশু রাসেল মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছিল, বঙ্গবন্ধুর আনন্দের সঙ্গী ছিল আর বাঙালির চিরন্তন পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধনে তার অনাবিল উচ্ছ্বাস ছিল অফুরন্ত। ছোট্ট শিশুটি যে প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতার নির্মমতম শিকার হয়েছিল, তা এখনো বিশ্ব মানবতাকে বিচলিত করে।

জন্মদিনে শেখ রাসেলকে স্মরণ করি গভীর আবেগ, শূন্যতা ও ভালোবাসায়।অঙ্গীকার করি রাসেলের মতো প্রতিটি শিশুর কল্যাণের জন্য।  আর প্রতিজ্ঞবদ্ধ হয়ে উচ্চারণ করি, বাংলাদেশ হোক সকল শিশুর জন্য নিরাপদ আবাসস্থল।

Leave a Reply