Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
‘ব্যাটা মেডিকেলত চাস পায়া চিনতাত ফেলাচে, ট্যাকা পামো কোনটে’

‘ব্যাটা মেডিকেলত চাস পায়া চিনতাত ফেলাচে, ট্যাকা পামো কোনটে’

‘মেডিকেলোত ভর্তি হলে ছোলটা ডাক্তার হবি, কিন্তু ভর্তি পরিখাত পাস করি হামারঘরক চিনতাত ফেলাচে। একন হামরা ভর্তির ট্যাকা পামো কোনটে?’ কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশের উত্তরের জেলা গাইবান্ধা শহরের কালীবাড়িপাড়ার হোটেল শ্রমিক প্রবীর সরকার।

সন্তানের সাফল্যে খুশি হলেও পড়াশোনার আগামী দিনগুলোর কথা ভেবে রাজ্যের দুশ্চিন্তা ভর করেছে দরিদ্র এই বাবার মনে। তাঁর ছেলে প্রতীক কুমার সরকার এবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। প্রতীকরা থাকেন শহরের ব্রিজ রোড কালীবাড়িপাড়ার একটি টিনশেড ঘরে।

হৃদয় মণ্ডলের কারাগারে যাওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক: শিক্ষামন্ত্রী

মা–বাবা আর দুই ভাই-বোন—এ নিয়ে তাঁদের সংসার। প্রতীকের মা বীথি সরকার গৃহিণী। একমাত্র বোন অনন্যা সরকার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দুই শতক ভিটায় ওই টিনশেড ঘর ছাড়া আর কোনো সম্পদ তাঁদের নেই। ওই ঘরের বারান্দায় কক্ষ বানিয়ে সেখানে লেখাপড়া করেন প্রতীক। প্রতীক কুমার ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র। ২০১৩ সালে গাইবান্ধা ইসলামিয়া কিন্ডারগার্টেন থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। পরে তিনি গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

সেখানে অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পান। ২০১৯ সালে একই বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান। ২০২১ সালে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে প্রতীক জিপিএ-৫ পান। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এ কলেজে ভর্তির তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। বিজ্ঞাপন ভর্তির টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রতীকের বাবা। তিনি হোটেল থেকে মাসে ৯ হাজার টাকা বেতন-ভাতা পান। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। বেতনের টাকা দিয়ে সংসারই চলে না। এর পাশাপাশি আছে দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগানো।

দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে: সম্প্রীতি বাংলাদেশ

মেডিকেলে ভর্তি হতে অন্তত ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন, পাশাপাশি আছে বই কেনা ও ময়মনসিংহে থেকে লেখাপড়া চালানো। সব মিলিয়ে সন্তানের ভবিষ্যৎ দিনগুলো নিয়ে বেশ চিন্তায় প্রবীর সরকার। প্রবীর সরকার বলেন, পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে কিংবা পোশাক, বই-খাতা কিনতে অতিরিক্ত খরচ হয়। ফলে ৮-৯ বছর ধরে দুটি এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিচ্ছেন, পরিশোধও করছেন। আবার ঋণ নিয়ে কিস্তি চালাচ্ছেন। বর্তমানে দুটি এনজিওতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ আছে তাঁর।

প্রতি সপ্তাহে দুটি প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে কিস্তির টাকা দিতে হয়। তিনি বলেন, কোনো পূজার সময় ছেলে–মেয়েকে নতুন পোশাক দিতে পারেননি। দুবেলা কোনোমতে ভাত জুটলেও শাকসবজি ও ভর্তা–ছানা ছাড়া ভালোমন্দ খাবার জোটেনি। কত দিন থেকে মাংস ও বড় মাছ কেনেননি, তা তাঁর মনে পড়ে না। প্রতীক কুমারের মা বীথি সরকার বলেন, ‘ব্যাটা ছোট কেলাসোত আচিলো, ভালো আচিনো। মেডিকেলত চাস পায়া হামারঘরক চিনতাত ফেলাচে।’ সংসার চালাতে বাবা হিমশিম খাওয়ায় টিউশনি করে নিজের বই-খাতা কেনার পাশাপাশি সংসারেও কিছু টাকা দিতে হয় প্রতীককে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ সময় পান্তা খেয়ে সকালে বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে।

টিফিন হিসেবে ছিল পানি। বিদ্যালয় থেকে ফিরেও অনেক সময় চাল ভাজা খেতে হয়েছে। রাতে দুমুঠো ভাত জুটলেও পেটভরে খাওয়া হয়নি। সহপাঠীদের সঙ্গে আড্ডা না দিয়ে সেই সময় লেখাপড়া করেছেন। ভোর রাতেই পড়েছেন বেশি। প্রতীক কুমার বলেন, ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সে জন্য মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করেছেন। তাঁর স্বপ্নও পূরণ হয়েছে।

ডিপ্লোমা নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ব্যাংক ২০২১

কিন্তু তাঁর বাবা ভর্তির টাকা জোগাতে পারছেন না। তিনি জানান, ভর্তির সুযোগ পেলে চিকিৎসক হবেন। তখন তিনি বিনা মূল্যে গরিব–অসহায় মানুষকে সেবা দেবেন। গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহানা বানু প্রথম আলোকে জানান, প্রতীক খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। বিদ্যালয় থেকেও বিভিন্ন সময় তাঁকে সহায়তা ও পড়াশোনায় মনোযোগী হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সহায়তা পেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারলে তিনি একসময় এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবেন। জেলা থেকে আরও পড়ুন

Leave a Reply