১৯৬৫ সালের ২রা নভেম্বর, নয়াদিল্লীর তালভার নার্সিং হোমে জন্ম হয় একটি শিশুর। শিশুটির মা পরবর্তীতে তার জন্মের গল্প বলতে গিয়ে এতোটুকুই মনে করতে পেরেছিলেন যে, কোনো এক নার্স নাকি বলেছিল সে বড় হয়ে অনেক বিখ্যাত হবে। হ্যাঁ, সেই শিশুটিই আজকের শাহরুখ খান।
শৈশব তার কেটেছে দিল্লীর রাজিন্দর নগরে। নিজের জীবনীতে সেই বাড়ির নাম্বারটিও লিখেছেন তিনি, এফ-৪৪২। বাড়ির পাশে ‘টিনি টটস’ নামে একটি প্লে স্কুলে প্রাথমিক পড়ালেখা শুরু করেন। কোনো এক আইরিশ ব্যক্তি ও তার ভাইয়ের দ্বারা পরিচালিত ‘সেইন্ট কলাম্বিয়া স্কুলে’ তিনি মাধ্যমিক পড়ালেখার জীবন শুরু করেন। তার বাবা মীর তাজ মোহাম্মদ ছিলেন পাঠান বংশীয়। তিনি পরিবহন ব্যবসা করতেন। শাহরুখের মা লতিফ ফাতিমা একজন সরকারি প্রকৌশলীর মেয়ে ছিলেন। তাদের বিয়ে হয় ১৯৫৫ সালে। তার বড় এক বোনও রয়েছে, নাম শাহনাজ লালারুখ।
সেইন্ট কলাম্বিয়া স্কুল ও শাহরুখ
ছোটবেলা থেকেই শাহরুখ ছিলেন খুবই কেতাদুরস্ত। বিশেষ করে চুলের যত্ন করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাবধান। কিন্তু কলাম্বিয়া স্কুলে গিয়েই যেন সব অন্যরকম হয়ে গেল। সেই স্কুলের ছাত্রদের মেনে চলতে হতো কঠোর নিয়মকানুন। ইউনিফর্মের সাথে চুলের প্রতিও বিশেষ নজর দিত স্কুল কর্তৃপক্ষ। শাহরুখ তাই বিপদে পড়লেন। বড় চুল রাখার কারণে প্রায়ই তাকে এসেম্বলি থেকে সোজা নাপিতের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হতো। শাহরুখ বেশ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তবে পড়ালেখায় তার মন একদমই বসতো না। বছর জুড়ে নিজের ইচ্ছেমতো পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কাজ করে বেড়াতেন আর পরীক্ষার আগের রাতে চোখের পাতা ফেলার সময় পেতেন না, একেবারে পরীক্ষা দিয়ে এসেই চোখ বন্ধ করতেন!
হিন্দিতে খুবই দুর্বল ছিলেন শাহরুখ। সবসময় হিন্দিতে ফেল করতেন। একবার পরীক্ষার আগে তার মা তাকে বললেন হিন্দিতে ভাল মার্ক পেতে পারলে তাকে সিনেমা দেখতে নিয়ে যাবেন। তখনো পর্যন্ত সিনেমা হলে যাননি শাহরুখ। তাই পরীক্ষার আগে হিন্দি পড়ায় আদা জল খেয়ে লেগে গেলেন এবং হিন্দিতে খুবই ভাল ফলাফল করলেন। কথামতো তার মা ফাতিমা তাকে নিয়ে গেলেন একটি থিয়েটারে। আর প্রথমবারের মতো হিন্দি চলচ্চিত্র দেখেই প্রেমে পড়ে গেলেন তিনি। এ ব্যাপারে একবার এক ইন্টারভিউয়ে তিনি বলেছিলেন, সেদিনের সেই সিনেমাটিই তার মনে সিনেমা প্রীতি সৃষ্টি করেছিল। একবার ভাবুন তো, ফাতিমা তার ছেলেকে যদি সেদিন থিয়েটারে না নিয়ে যেতেন, তাহলে হিন্দি চলচ্চিত্র কি হারাতো!
বড় হয়ে যিনি ‘রোম্যান্স এর রাজা’ হবেন, কৈশোরেই তার মধ্যে দেখা যেত সেই আভাস। স্কুলের দেয়ালে বসে তিনি ‘ফ্লায়িং কিস’ পাঠাতেন তার চেয়ে বয়সে বড় মেয়েকেও যদি মেয়েটিকে তার মনে ধরে যেতো। তবে একবার এক মেয়ে তার বাবার কাছে নালিশ করলে তার ‘ফ্লায়িং কিস’ বন্ধ হয়ে যায় চিরতরে। কিন্তু সাহসী শাহরুখ বাবার কাছে স্বীকার ঠিকই করেছিলেন যে বয়সে বড় আপুটিকে তার মনে ধরেছিল!
ফুটবলে তার প্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন পেলে, ম্যারাডোনা, সক্রেটিসের মতো কিংবদন্তিরা। আর নিজ দেশে তার প্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন আসলাম শের খান যার মতো হবার জন্য মনে মনে স্বপ্ন বুনতেন কিশোর কিং খান।
আরো পড়ুন:ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ অলরাউন্ডার
শাহরুখ খানের জীবনী
Shahrukh Khan Life History
নাম শাহরুখ খান/Shahrukh Khan
জন্ম ২রা নভেম্বর ১৯৬৫ (নয়া দিল্লি)
বর্তমান বাসস্থান মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা (মুম্বাই, ভারত)
অভিভাবক মীর তাজ মোহাম্মদ খান (বাবা)
লতিফ ফাতিমা (মা)
দাম্পত্যসঙ্গী গৌরী খান
সন্তান আরিয়ান খান, সুহানা খান, আব্রাম খান
পেশা অভিনেতা, প্রযোজক, টেলিভিশন উপস্থাপক
জাতীয়তা ভারতীয়
ধর্ম ইসলাম
অন্য নাম কিং খান, বাদশাহ, কিং অফ বলিউড, কিং অফ রোমান্স
ভারতীয় সিনেমা জগতের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হলেন কিং অফ বলিউড খ্যাত অভিনেতা শাহরুখ খান | একসময় দিল্লীর এই সাধারণ ছেলে যাকে কেউ চিনতো না এবং জানতোও না; আজ সে এতটাই জনপ্রিয় যে তাকে শুধু ভারতের মানুষরাই নয়, সারাবিশ্বের মানুষরাও চেনে তার অসাধারণ এক্টিং স্কিলের সুবাদে |
তুমি কি এটা জানো, শাহরুখ খান এতদিনে ৮০টারও বেশি সিনেমা করে ফেলেছেন বলিউডে এবং ১৪টা Flimfare পুরস্কারও জিতে ফেলেছেন | সেইসাথে তিনি হয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী অভিনেতাদের মধ্যেও একজন |
Early Life of Shahrukh Khan:
২রা নভেম্বর ১৯৬৫ সালে, নয়া দিল্লিতে শাহরুখ খানের জন্ম হয় | কিন্তু জীবনের প্রথম পাঁচ বছর তিনি ভারতের ম্যাঙ্গালোর শহরে কাটান, নয়া দিল্লিতে নয় |
তার বাবা মীর তাজ মোহাম্মদ ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং মা লতিফ ফাতিমা ছিলেন একজন সাধারণ গৃহবধু | তাদের আদি বাসস্থান ছিলো বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরে | কিন্তু দেশভাগের সময় তারা পরিবার সহ ভারতে চলে আসেন এবং নয়া দিল্লিতে বসবাস করা শুরু করেন |
২০১০ সাল পর্যন্তও তার পরিবারের বাকি সদস্যরা, পাকিস্তানের পেশোয়ার অঞ্চলের কিসসা খাবানি বাজার সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করতেন; কিন্তু পরে তারা প্রত্যেকেই ভারতে চলে আসেন |
যখন মীর তাজ মোহাম্মদ ভারতে এসেছিলেন তখন তিনি তার পরিবারকে নিয়ে নয়া দিল্লীর রাজেন্দার নগর এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে গিয়ে ওঠেন এবং সেখানেই বসবাস করা শুরু করেন | এই এলাকাতেই ছোট্ট শাহরুখের বেড়ে ওঠাও শুরু হয় |
এরপর পরিবারের আর্থিক সমস্যা দূর করার জন্য তার বাবা মীর তাজ মোহাম্মদ সেই এলাকায় একটা খাওয়ারের দোকান দেন এবং সেখান থেকে উপার্জিত পয়সায়, তিনি তার ছেলেকে দিল্লীর একটা নামী স্কুলে ভর্তিও করেন |
Education & Acting Life of Shahrukh Khan:
শাহরুখ খানের প্রাথমিক শিক্ষাজীবন, দিল্লীর সেন্ট কলম্বাস স্কুল থেকে শুরু হয় | সেই স্কুলের তিনি একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন | পড়াশোনায় ভালো হওয়ার পাশাপাশি তিনি খেলাধুলাতেও ছিলেন অসাধারণ এবং স্কুলের হয়ে হকি ও ফুটবল খেলতেন |
পড়াশোনায় দারুন সাফল্যের জন্য, তিনি একবার সেই স্কুলের সর্বোচ্চ পুরুস্কার Sword of Honor পদে সম্মানিতও হন |
সেইসময় তার জীবনের লক্ষ্য ছিলো, বড় হয়ে একজন খেলোয়াড় হওয়ার | দিনরাত তিনি সেটারই স্বপ্ন দেখতেন এবং সেইসাথে খেলাধুলার পিছনে পরিশ্রমও করতেন |
কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে, তিনি সেই স্বপ্নকে কোনোদিনই পূরণ করতে পারেননি, কারণ একটা দুর্ঘটনায় তার কাঁধে বড় ধরনের চট লাগে এবং তাকে খেলাধুলা সারাজীবনের জন্য ছেড়ে দিতে হয় |
তবুও এত কিছু হওয়ার পরও কিং খান কিন্তু সহজে হার মানেননি | কারণ তার ভীতর আরেকটা দারুন প্রতিভা ছিলো, আর সেটা ছিলো তার অভিনয় |
স্কুল জীবন থেকেই তিনি অভিনয় করতে বেশ ভালোবাসতেন এবং বিভিন্ন নাটকেও অংশ নিতেন | আলাদা আলাদা চরিত্রে অভিনয় করতে তার বেশ ভালো লাগতো | কিন্তু খেলাধুলায় আর পড়াশোনায় ভালো হওয়ার জন্য তিনি অভিনয় জগৎ নিয়ে বেশি ভাবতেন না |
শাহরুখ খানের Alltime Favorite ভারতীয় অভিনেতারা হলেন- দিলীপ কুমার, অমিতাভ বচ্চন এবং মুমতাজ | এনাদের অভিনয় দেখেই তিনি জীবনে অনেক কিছু শিখেছেন এবং তার অভিনয় জগতে আসার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণাও ছিলেন এই তিন ব্যক্তিত্ব, যা তিনি আজও স্বীকার করেন |
দিল্লীর হান্সরাজ কলেজ থেকে ইকনমিক্সে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর তিনি কিন্তু সেই বিষয়ে আর বেশিদূর এগোননি | কারণ বেশিরভাগ সময় তার সময় কাটতো দিল্লীর থিয়েটার অ্যাকশন গ্রুপে | সেখানে তিনি বেশিরভাগ সময়ই নিজের অভিনয় দক্ষতাকে improve করতে কাটিয়ে দিতেন |
ওই গ্রুপে থাকার সময় পরিচালক ব্যারি জনের তত্ত্বাবধানে তিনি নিজের অভিনয় দক্ষতাকে আরো উন্নতমানের করে তুলতে সক্ষম হন |
এরপর শাহরুখ খান ঠিক করেন, Mass Communication নিয়ে মাস্টার্স করবেন কিন্তু সেটা তিনি আর করে উঠতে পারেননি | অভিনয়ের জন্য তিনি সেই কোর্সকে মাঝপথেই ছেড়ে দেন এবং তারপর ভর্তি হন “ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে” বলিউডে সুযোগ পাওয়ার আশায় |
Acting Career of Shahrukh Khan:
১৯৮৮ সালে প্রথমবারের জন্য শাহরুখ খান টেলিভিশন জগতে আত্মপ্রকাশ করেন | লেখ ট্যান্ডন প্রযোজিত টেলিভিশন সিরিজ “দিল দরিয়াতে” তিনি প্রথমবার অভিনয় করেন | কিন্তু সেই টেলিভিশন সিরিজ, কিছু প্রোডাকশন জনিত সমস্যার জন্য এক বছর পর শুরু হয় |
এই এক বছরের সময়ের ব্যবধানে তিনি আরো একটি টেলিভিশন সিরিজের সাথে যুক্ত হন যেটার নাম ছিলো “ফৌজী” | সেখানে তিনি কমান্ডো অভিমন্যু রাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন | যদিও সেটা তার দ্বিতীয় টেলিভিশন সিরিজ ছিলো কিন্তু হিসাবমতো সেই সিরিজেই শাহরুখ খানের প্রথমবারের জন্য আত্মপ্রকাশ ঘটে |
এই দুটো টেলিভিশন সিরিজ ছাড়াও তিনি আরো অনেক টেলিভিশন সিরিজ করেন | সেইগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় কিছু হলো- সার্কাস (১৯৮৯-১৯৯০), ইডিয়ট (১৯৯০), উমিদ (১৯৮৯), ওয়াগলে কি দুনিয়া (১৯৮৮-১৯৯০) প্রভৃতি |
এরপর টেলিভিশন জগতে দুর্দান্ত সাফল্যের পর তার কাছে বলিউড থেকে অফার আশা শুরু হয় | তার কাছে প্রথম অফার আসে হেমা মালিনীর তরফ থেকে, যিনি কিনা পরিচালক হিসাবে তার প্রথম সিনেমা “দিল আশনা হের” জন্য তাঁকেই পছন্দ করেন একজন মুখ্য চরিত্র হিসাবে | কিন্তু সেই সিনেমা তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি |
আরো পড়ুন: বিরাট কোহলির জীবনী
হিসাব মতো দেখতে গেলে তার প্রথম ডেবিউ সিনেমা হলো “দিওয়ানা”, যেটা ১৯৯২ সালে প্রকাশ পেয়েছিলো | সেই সিনেমায় মুখ্য দুই চরিত্র ছিলেন ঋষি কাপুর ও দিব্যা ভারতী কিন্তু তবুও সিনেমায় তার চরিত্রও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো |
সেইবছর “দিওয়ানা” বক্স অফিসে রেকর্ড গড়ে দেওয়ায় এবং ব্লক বাস্টার সিনেমা হিসাবে পরিচয় পাওয়ায়, শাহরুখ খানও রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যান | সেই সিনেমায় তার দুর্দান্ত অভিনয়, মানুষকে পুরোপুরি মুগ্ধ করে দিয়েছিলো |
ব্যাস! তারপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি | এরপর একের পর এক সিনেমার অফার আর সেইসাথে সাফল্যও আসতে শুরু করে দেয় তার কাছে |
জীবনের প্রথম সিনেমায় দারুন অভিনয় করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক Filmfare অনুষ্ঠানে Best Male Debut পুরস্কার পান |
তুমি কি এটা জানো? প্রাথমিক পর্যায়ে যখন তিনি বলিউডে একজন অভিনেতা হিসাবে যোগদান করেন, তখন তিনি কিন্তু বেশ কিছু বছর সিনেমায় খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন | প্রথম থেকেই তিনি কিন্তু হিরো হিসাবে অভিনয় করতেন না |
খলনায়ক হিসাবে বলিউডে তার বিখ্যাত কিছু সিনেমা হলো- ডর (১৯৯৩), বাজিগার (১৯৯৩) এবং আনজাম (১৯৯৪) |
এরপর তিনি অবশেষে রোমান্টিক হিরো হিসাবে কাজ করার জন্য বেশ কিছু সিনেমার অফার পান | যারমধ্যে জনপ্রিয় তার কিছু সিনেমা হলো- দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে (১৯৯৫), দিল তো পাগাল হে (১৯৯৭), কুছ কুছ হোতা হে (১৯৮৮), কাভি খুশি কাভি গম (২০০১) প্রভৃতি |
এছাড়াও তিনি দেবদাস সিনেমায় (২০০২) একজন নেশায় আসক্ত ব্যক্তি, স্বদেশ সিনেমায় (২০০৪) নাসার একজন বিজ্ঞানী, চক দে ইন্ডিয়া সিনেমায় (২০০৭) একজন হকি প্রশিক্ষক এবং মাই নেম ইজ খান সিনেমায় একজন এস্পের্গের সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি হিসাবে অভিনয় করে ভারতীয় দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন |
আজও এই প্রত্যেকটা সিনেমা এখনও অবধি সকল ভারতীয় সিনেমা প্রেমীদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে |
Miscellaneous Work of Shahrukh Khan:
২০১৫ সালে শাহরুখ খান ভারতের মোশান ছবি নির্মাতা কোম্পানি “রেড চিলি এন্টারটেনমেন্টের” সহ-সভাপতি হিসাবে যোগদান করেন এবং তাদের সাথে মিলে দারুন কিছু সিনেমা উপহার দেন দর্শকদের |
এছাড়াও তিনি ২০০৮ সালে আইপিএলের জন্য কোলকাতা নাইট রাইডার্স নামে একটা দলও তৈরী করেন, যা পরবর্তীকালে ২০১২ এবং ২০১৪ সালে দুবার সেই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দলও হয় |
সেই দলের হয়ে সৌরভ গাঙ্গুলী এবং গৌতম গম্ভীরের মতো বিশ্বের অনেক লিজেন্ডারি খেলোয়াড়রাও খেলেছিলেন একসময় |
শাহরুখ খানের আরেকটা সবচেয়ে বড় প্রতিভা হলো, তিনি দারুনভাবে যেকোনো শোয়ের হোস্ট করতে পারেন এবং সেই সাথে মানুষকে লাইভ হাসাতে পারেন | যেটা অন্যান্য অনেক অভিনেতার পক্ষেই কঠিন একটা বেপার | তার এই প্রতিভার জন্য মিডিয়ার কাছে তিনি “ব্র্যান্ড এসআরকে” নামেও পরিচিত |
এইসব ছাড়াও তিনি কিন্তু অনেক সামাজিক কাজের সাথেও যুক্ত হয়ে আছেন মানুষের সেবা করার আশায় ।
অনেক স্বাস্থ্য সংস্থা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে তিনি অনবরত জনগণের সেবা করে চলেছেন । তিনি জরুরি অবস্থাতেও অনেকবার মানুষকে সাহায্য করেছেন, এবং দরিদ্র ও অনাথদের শিক্ষার জন্যও অনেক অর্থও দান করেছেন | ২০০৪ সালে নিউজ উইক পত্রিকা, তাকে বিশ্বের 50 জন শক্তিশালী ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ।
Marriage Life of Shahrukh Khan:
২৫শে অক্টোবর ১৯৯১ সালে, শাহরুখ খান বিয়ে করেন তার যৌবন বয়সের প্রেমিকা গৌরী চিব্বারের সাথে, যিনি কিনা একজন পাঞ্জাবী হিন্দু ছিলেন | ৬ বছর ধরে তারা একে অপরকে ভালোবাসতেন এবং অবশেষে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন পরবর্তীকালে |
সেই বিয়ে কিন্তু ইসলাম ধর্ম অনুসারে হয়নি, হয়েছিল হিন্দু ধর্ম অনুসারে | বিয়ের ৬ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৭ সালে অবশেষে তাদের প্রথম সন্তান হয় যার নাম তারা রাখেন আরিয়ান খান | এরপর তাদের আরো দুটো সন্তান হয় যাদের নাম যথাক্রমে- সুহানা খান (২০০০) ও আব্রাম খান (২০১৩) রাখা হয় |
Shahrukh Khan With His Wife Gauri khan
শাহরুখ খান বলেন- তিনি তার ধর্মকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করেন এবং সেইসাথে তার স্ত্রী গৌরীর ধর্মকেও গভীরভাবে শ্রদ্ধা করেন | তার কাছে সব ধর্মই শ্রদ্ধার যোগ্য, কোনো ধর্মই তার কাছে ছোট কিংবা বড় নয় |
তার সন্তানরাও তারই মতো দুটো ধর্মকেই গভীরভাবে শ্রদ্ধা এবং ভক্তি করে | তাদের ঘরে যেমন ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরান আছে, সেইসাথে আছে হিন্দু সব দেব-দেবীর মূর্তিও |
আরো পড়ুন: কোন দেশে কত পরমাণু অস্ত্র | পরমাণু বোমা কোন দেশে কত | কোন দেশে কত পরমাণু বোমা?
এক কথায় যদি বলতে হয়, তাহলে তিনি হলেন সমস্ত হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণা | তাকে দেখে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের শেখা উচিত |
Awards of Shahrukh Khan:
- Filmfare Awards- ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০১, ২০০৩, ২০০৫, ২০০৮, ২০১১, ২০১৯
- Zee Cine Awards- ২০০৩, ২০০৫, ২০১১, ২০১২, ২০১৪, ২০১৮
- Stardust Awards- ২০১৩, ২০১৪, ২০১৭
- Star Box Office India Awards- ২০১৪
- Screen Weekly Awards- ২০০৩, ২০০৫, ২০০৭
- Mirchi Music Awards- ২০১৪
- Kids’ Choice Awards- ২০১৩
- Indian Telly Awards- ২০০৭
- International Indian Film Academy Awards- ২০০৩, ২০০৫, ২০০৮, ২০০৯, ২০১১
- Asian Film Awards- ২০০৭
- Apsara Film Producers Guild Awards- ২০০৮, ২০১০, ২০১১, ২০১৪
- Annual Central European Bollywood Awards- ২০০৭, ২০০৮, ২০১১
চলুন জেনে নেই শাহরুখ খান সম্পর্কে ২০টি তথ্য।
১. তাজ মুহম্মদ খান আর লতিফ ফাতিমার পরিবারে ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর জন্ম হয় শাহরুখের। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি নানীর সঙ্গে প্রথমে ম্যাঙ্গালোর আর তারপরে ব্যাঙ্গালোরে থাকতেন। নানী তাঁর দেখাশোনা করতেন। শাহরুখের নানা ম্যাঙ্গালোর বন্দরের মুখ্য প্রকৌশলী ছিলেন।
২. শাহরুখের বাবা পাকিস্তানের পেশোয়ারের মানুষ, মা ভারতের হায়দ্রাবাদের আর দাদি কাশ্মীরের।
৩. বাড়িতে শাহরুখের বাবা ‘হিন্দকো’ ভাষায় কথা বলতেন। এই ভাষা পাকিস্তানে ব্যবহৃত পাঞ্জাবী কথ্য ভাষা।
৪. পাকিস্তানের পেশোয়ারের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগ নিয়মিত ছিল। ১৯৭৮-৭৯ সালে তিনি গিয়েছিলেন বাবার ফেলে আসা শহরে। সে প্রথমবার শাহরুখ বাবার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ভারতে শুধু তাঁর মায়ের দিকের আত্মীয় স্বজন ছিলেন, বাবার গোটা পরিবারই পেশোয়ারে থাকতেন।
৫. একটু বড় হওয়ার পরে শাহরুখের পরিবার দিল্লিতে চলে আসেন। সেন্ট কলাম্বাস স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। খেলাধুলোয় খুব আগ্রহী ছিলেন শাহরুখ।
৬. স্কুলে পড়ার সময়ে শাহরুখ হিন্দিতে খুব একটা দক্ষ ছিলেন না। তবে একবার হিন্দি পরীক্ষায় দশে দশ পেয়েছিলেন তিনি, পুরষ্কার হিসাবে তাঁর মা সিনেমা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
৭. দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে বি এ পাশ করেন আর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে মাস কমিউনিকেশন নিয়ে এম এ পড়তে ভর্তি হন। তবে সেটা আর শেষ করা হয় নি তাঁর।
৮. শাহরুখ খানের স্ত্রী গৌরীর বাবা একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। স্কুলে পড়ার সময় গৌরীর সাথে প্রথম চেনা পরিচিতি হয় শাহরুখের। একটা পার্টিতে দুজনের মধ্যে বেশ অনেকক্ষণ গল্প চলে। তখন থেকেই শুরু হয় শাহরুখ-গৌরীর প্রেম পর্ব।
৯. সেই তারিখটাও মনে আছে শাহরুখের – দিনটা ছিল ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের নয় তারিখে। সেই দিনই শাহরুখ ড্রাইভিং লাইসেন্সও পেয়েছিলেন।
১০. গৌরী আর শাহরুখের বিয়ে হয় ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর।
১১. শাহরুখের যখন ১৫ বছর বয়স, তখনই তাঁর বাবা মারা যান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে। পেশায় উকিলও ছিলেন আবার স্বাধীনতা সংগ্রামেও অংশ নিয়েছিলেন শাহরুখের বাবা তাজ মুহম্মদ খান। অল্প বয়সে একবার জেলও খেটেছেন, পরে মৌলানা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন তাজ মুহম্মদ খান।
১২. শাহরুখ খানের প্রথম রোজগার ছিল ৫০ টাকা। গায়ক পঙ্কজ উদাসের একটা কন্সার্টে কাজ করে সেই টাকা পেয়েছিলেন। প্রথম রোজগারের টাকা দিয়ে ট্রেনের টিকিট কেটে শাহরুখ আগ্রা গিয়েছিলেন ।
১৩. তবে শাহরুখের প্রথম টেলি-সিরিয়াল শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। কর্নেল কাপুরের পরিচালনায় ‘ফৌজি’ নামের সেই ধারাবাহিক খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। সেখানেই প্রথমবার ভারতের দর্শক দেখলেন পরের কয়েক বছরে স্টার থেকে সুপার স্টার হয়ে ওঠা শাহরুখ খানকে।
১৪. ছোট থেকেই শাহরুখ খানের ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। কলকাতার ‘আর্মি স্কুল’-এ ভর্তিও হয়েছিলেন শাহরুখ, কিন্তু ছেলেকে ছাড়তে রাজি হন নি তাঁর মা ।
১৫. ১৯৮৯-৯০ সালে রেণুকা সাহানের সঙ্গে ‘সার্কাস’ সিরিয়ালে কাজ করতে শুরু করেন শাহরুখ। সেই সময়ে তাঁর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মাকে ধারাবাহিকটার একটা পর্ব দেখানোর জন্য বিশেষ অনুমিত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর মা তখন এতটাই অসুস্থ, যে ছেলেকে চিনতেও পারেন নি। ১৯৯১ সালের এপ্রিল মাসে মৃত্যু হয় শাহরুখ খানের মায়ের।
১৬. মায়ের মৃত্যুর শোক থেকে দূরে সরে যেতে এক বছরের জন্য শাহরুখ দিল্লি থেকে মুম্বাই গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ফেরা আর হয়নি আর।
১৭. সে বছরই প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শাহরুখ খান। সেটি ছিল হেমা মালিনী অভিনীত ‘দিল আসনা হ্যায়’। নায়ক হিসাবে শাহরুখকে প্রথম দেখা গেল পরে বছর ২৫ জুন ১৯৯২তে ‘দিওয়ানা’য়।
১৮. কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন শাহরুখ। মাত্র চার পাঁচ ঘণ্টা ঘুমান তিনি। তাঁর প্রিয় উক্তি হলো, ‘ঘুমানো মানে জীবন নষ্ট করা’।
১৯. স্ত্রী সন্তান ছাড়া শাহরুখের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে থাকেন বড় বোন লালারুখ।
২০. শাহরুখ খানের টুইটার একাউন্টে প্রায় তিন কোটি ফলোয়ার রয়েছে।
বিখ্যাত অভিনেতা শাহরুখ খানের জীবন কাহিনী, সাফল্য এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্প জানুন!,শাহরুখ খান,একদা রাজা, সর্বদাই রাজা,শাহরুখ খান জীবনী , Shahrukh Khan Biography in Bengali,শাহরুখ খানের জীবনী, Shahrukh Khan Life History in Bengali,শাহরুখ খানের বাড়ি কোথায়, শাহরুখ খানের ছেলে, গৌরী খান শাহরুখ খানের স্ত্রী, শাহরুখ খানের বাড়ি, শাহরুখ খানের পরিবার, শাহরুখ খান গৌরি, শাহরুখ খানের মেয়ে,shahrukh khan last movie, shahrukh khan net worth, shahrukh khan age, shahrukh khan wife, shahrukh khan daughter, shahrukh khan son, shahrukh khan sister, shahrukh khan twitter