চোখ সুস্থ রাখার ৫টি উপায়

চোখ সুস্থ রাখার ৫টি উপায়

এই সময়ে স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে রাখায় দায়। এর থেকে হতে পারে নানান সমস্যা। তবে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার উপায় হল কিছুক্ষণ পর পর চোখকে বিশ্রাম দেওয়া।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে জানানো হয়, কাজের সময় ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পর কয়েক মিনিট চোখদুটো বিশ্রাম দিলে চোখের আর্দ্রতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়াও আরও কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে-

কম্পিউটার ব্যবহার: চোখের যেকোনো সমস্যায় আমরা দীর্ঘ সময় কম্পিউটার মনিটর, টিভি বা স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে থাকাকেই দায়ী করে থাকি। তবে এই সমস্যার প্রকোপ কমানোরও উপায় আছে বলে জানান চক্ষুবিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে কম্পিউটারে কাজ করা উচিত। তাছাড়া এক টানা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যেতে পারে। তাই কিছু সময় পর পর মনিটর বা স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে বিশ্রাম দিন।

চশমা চোখের দৃষ্টি শক্তি কমায় না: যারা চশমা পরেন তাদের কিছুদিন পর পর তা বদলাতে হয়। এর কারণ দিন দিন দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া। অনেকে মনে করেন চশমা পরার কারণে দৃষ্টি শক্তির অবনতি হচ্ছে। আসলে বয়স বাড়ার কারণে চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে।

মেইকআপ চোখের জন্য ক্ষতিকর: চোখের পাপড়িতে মাস্কারার ব্যবহার, কাজল লাগানো বা গ্লিটার শ্যাডো এই মেইকআপ অনুষঙ্গগুলো চোখ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করলেও এর কণা বা অবশিষ্ট অংশ কোনোভাবে চোখের ভেতরে প্রবেশ করলে তা অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষত মেইকআপের কণা যদি চোখে আটকে যায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

Read More: শরীরের তিল দেখে ভবিষ্যত গণনা | শরীরের কোথায় তিল থাকলে কী হয়!

ধূমপান চোখের জন্যও ক্ষতিকর: সিগারেট যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ঠিক তেমনি দৃষ্টিশক্তিও কমিয়ে দেয় এই বদোভ্যাস। ধূমপানের কারণে অক্ষিপট ও ‘অপটিক নার্ভ’ বা মস্তিষ্ক থেকে চোখে সংযোগকারী স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে দৃষ্টিমক্তি কমতে থাকে এমনকি ভবিষ্যতে অন্ধত্বের মতো গুরুতর পরিস্থিতিও আসতে পারে।

সারা রাত লেন্স পরে থাকা: পাওয়ার বা ফ্যাশন লেন্স যেটাই হোক না কেনো দীর্ঘসময় পরে থাকা মোটেও ভালো নয়। কিছু লেন্সে লেখা থাকে ‘সারা রাত বা দীর্ঘ সময়ের জন্য উপযোগী। তবে মনে রাখতে হবে আট ঘণ্টার বেশি লেন্স পরা উচিত নয়। আর ঘুমানোর আগে অবশ্যই অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল লেন্স সল্যুশনে লেন্স ভিজিয়ে রাখতে হবে। আর লেন্স ধরার আগে হাত পরিষ্কারভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

দৃষ্টিশক্তি লোপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে: যাদের চোখ খুব ভালো তাদের ক্ষেত্রেও যেকোনো সময় দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে ঘরের বাইরে এবং প্রকৃতির মাঝে যারা বেশি সময় কাটান তাদের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয় দেরিতে।

 

চোখের

চোখ হলো মনের আয়নাস্বরূপ। মনের কথা বলে দেয় আমাদের দৃষ্টি। চোখ নিয়ে সাহিত্য, গান কত কিছুই না লেখা হয়েছে।

আমাদের চোখের গঠন এতটাই জটিল যে, সেটা মাঝে মাঝে কল্পনাকে হার মানায়। চোখের কার্যপদ্ধতি অনেকটা ক্যামেরার পদ্ধতির মতোই। চোখের পাতা কাজ করে ক্যামেরার শাটারের মতো, চোখের ভেতরে আছে স্থিতিস্থাপক লেন্স যা দর্শনীয় বস্তুকে ফোকাস করে এবং তারপর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে একসময় তা আমরা দেখতে পাই। এই প্রক্রিয়াকরণ চলে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই।

কিন্তু এই চোখের আগে যদি নাকের উপর চলে আসে একজোড়া চশমা, তবে ব্যাপারটা বেজায় কষ্টদায়ক তাতে সন্দেহ নেই!

যদি এমন হয়, আপনাকে এসব নাই করতে হয় আর আপনার চোখও ভালো থাকে। চোখ ভালো রাখতে অবশ্যই কিছু বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

চোখে চশমা বসার কারণ

  • আজকাল কমবয়সী পড়ুয়াদের চশমা ও ভারী পাওয়ার নিতে হচ্ছে। অনেকে সে ঝঞ্ঝাট থেকে বাঁচতে কন্ট্যাক্ট লেন্স লাগাচ্ছেন । কিন্তু এই দৃষ্টি সমস্যার কারণ অনেক।
  • গ্লুকোমা বা চোখের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে চোখের অপটিক স্নায়ু অকেজো হয়ে দৃষ্টিশক্তির বিলোপ।
  • চক্ষুনালীর প্রদাহ ও চোখের বহিঃস্থ শিরা ফুলে রক্তাভ বর্ণ ধারণ করা ও সংক্রমণ।
  • ভিটামিন এ-এর অভাবে চোখের মিউকাস শুকিয়ে কর্নিয়ার আলসার হয়ে যাওয়া।
  • ইউভিয়াটাইটিস বা ভাস্কুলার কোটের প্রদাহ যেটাতে চোখের যোজককলার ক্ষয় সাধিত হয়।
  • মায়োপিয়া বা দূরের জিনিস স্পষ্ট ভাবে দেখতে না পাওয়া বা আবছা দেখা। এই রোগে বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনার আগে গঠিত হয়।

এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ কর্মক্ষেত্রে কম্পিউটার এর সামনে বসে থাকা, মোবাইল স্ক্রিনে দীর্ঘ সময় যাবৎ চোখ রাখা, অতিরিক্ত টিভি দেখা ইত্যাদির ফলে চোখের দৃষ্টি অস্বচ্ছ হওয়া মাথাধরা বা চোখ লাল ইত্যাদি হয়।

যত্নে করণীয়:

ব্রেক গ্রহণ

যারা ডেস্ক জব করেন বা দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার এর কাজ যাদের করতে হয়, তাদের কম দূরত্বে বেশিক্ষণ ধরে ফোকাস বজায় রাখতে হয়, তাই দূরের দৃষ্টি খর্ব হয়ে যায়। ফলে মায়োপিয়া হবার চান্স থাকে।

বই পড়ার অভ্যেস থাকলে চোখের সাথে ৩০° কোন মেন্টেন করে পড়ুন ও বেশি টানা পড়বেন না। শুয়েশুয়ে বই পড়া ঠিক না। টিভি দেখুন মিনিমাম ১০ফুট দূরত্বে।

তাই টেবিলে বসে কাজ করার সময় ৩০মিনিট ছাড়া ছাড়া ব্রেক নিন ও দূরের জিনিস দেখুন। সবুজ গাছপালা দেখুন তাতে চোখ আরাম পাবে।

পলক ফেলা

Read More: কোথায় বজ্রপাত হবে তা আগেই জানা যাবে যেভাবে

ল্যাপটপের মনিটর হোক বা ফোনের স্ক্রিন বা টিভির এলইডি ডিসপ্লে সবথেকেই ক্ষতিকর ব্লু রে বেরোয় যা আমাদের চোখের পিউপিলের বারোটা তো বাজায় সাথে অনিদ্রা ও মনসংযোগহীনতা ডেকে আনে।

তাই ঘন ঘন চোখের পলক ফেলুন নতুবা চোখ হয়ে যাবে শুস্ক। মিনিটে কমপক্ষে ১৫বার চোখের পলক ফেলা জরুরি।

পারলে গ্লেয়ার ফ্রি স্ক্রিন লাগান মনিটরে। তাতে ব্লু লাইট ফিল্টার হয়ে যাবে।

আলোর পর্যাপ্ততা

আমাদের অনেকের মধ্যেই অভ্যাস আছে ঘর অন্ধকার করে টিভি দেখার, তাতে নাকি আনন্দ ও মজা বেশি পাওয়া যায়, কিন্তু আখেরে তা চোখের রড কোষের উপর মারাত্মক প্রেশার দেয়।

এর ফলে চোখের পেশীর উপর স্ট্রেন পড়ে ও চোখের রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চোখের ভিতরের আকার বিগড়ে যেতে পারে। তাই কম আলোতে কাজ করার অভ্যাস ত্যাগ করুন।

ত্রিফলার মন্ত্র

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা খুবই কার্যকরী। আমলকী, হরতকি এবং বহেরা একটা ব্লেন্ডারে নিয়ে চূর্ণ করে ফেলুন। সকালে খালি পেটে পানির সঙ্গে মিশিয়ে ত্রিফলা চূর্ণ খেতে পারেন।

এটি চোখের বর্ণ পৃথক করার ক্ষমতা ও চোখের ভিতরের সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলোকে সুরক্ষিত করে ও চোখের আর্দ্রতা ধরে রাখে।

ভিটামিন ইনটেক বাড়ান

চোখ ভালো রাখতে অতিরিক্ত মাছ মাংস ভক্ষণ প্রধান বাধক হয়ে দাঁড়ায়। সঙ্গে সবুজে অরুচি ও একটা বড় কারণ।

কিন্তু শাকসবজির সঙ্গে চোখের বোঝাপড়া খুবই নিপুণ। তাই চোখ বুজে গাজর, টমেটো, ব্রকোলি, বিন্স, পেপার, ফলমূল ও ড্রাই ফ্রুটস খান। সব ভিটামিন এর উৎস নিহিত রয়েছে এর মধ্যে।

সূর্যোদয় দেখা

চোখের সংবেদনশীলতা বাড়াতে ও শিথিলতা কমাতে সকালের সূর্যালোকের সমতুল্য কিছু হয় না।

তাই সকালে হাটতে বের হোন ও চোখ জুড়িয়ে সবকিছু আলোয় দেখুন। এতে আপনার স্বাস্থ্য ও ভালো থাকবে।

উষ্ণতার ছোঁয়া

চোখে টান অনুভব করলে দুটি হাতের তালু ঘষে গরম করে ৩০ সেকেন্ড মতো চোখের পাতা বন্ধ করে তার উপর চেপে ধরুন। এটি একটি ইনস্ট্যান্ট টোটকা।

এটি চোখের জন্য কার্যকর ও নিরাপদ। চোখের স্পর্শকাতরতা কমবে ও সক্রিয়তা বাড়বে।

চোখের ব্যায়াম

মাথা স্থির রেখে ক্লকওয়াইজ চোখের মণি ১০বার ও এন্টি ক্লকওয়াইজ ১০বার ঘোরান। এটি করলে চোখের লাল ভাব ও ভার হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।

চোখ বন্ধ করে চোখের মণি উপর থেকে নীচে ও নীচ থেকে উপরে তুলুন। এইভাবে ৫-১০বার করুন।

চোখের সামনে একটি কলম বা ফুল ধরে এগিয়ে আনুন যতক্ষণ না সেটার উপর চোখ তার ফোকাস হারাচ্ছে এবং সেটা ঘোলাটে দেখছেন। এরপর আস্তে আস্তে সেটা চোখের থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে সেটার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। এইভাবে কয়েক বার করতে থাকুন।

ডায়বেটিস রোগীদের অবশ্যই চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন।

ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন

Leave a Reply