আবাসিক হোটেল ভাড়ার নিয়ম
ঢাকায় কম দামে আবাসিক হোটেল ভাড়ার কথা মাথায় আসলে সবার আগে যে চিন্তা টি মাথায় আসে তা হলো আবাসিক হোটেল ভাড়ার নিয়ম কি। এক এক যায়গায় হোটেল ভাড়ার সিস্টেম এক এক রকম। তবে আমরা সাধারন একটি সিস্টেম বর্ননা করার চেষ্টা করছি যাতে আপনি একটি আইডিয়া পান। সাধারনত ঢাকার হোটেল গুলো সকাল ৮ থেকে ৮ টা রুম ভাড়া দিয়ে থাকে। অর্থাৎ আজকে সকাল ৮ টা থেকে দিন শুরু হবে। আপনি যদি ১০ টায় এসে রুম ভাড়া করেন সেক্ষেত্রে ও পরের দিন সকাল ৮ টার মধ্যে রুম খালি করতে হবে। তবে কিছু কিছু হোটেল আছে ১০ টা থেকে ১০ টা এবং কিছু হোটেল আছে ৬ টা থেকে ৬ টা হিসেব করে।
তাই আপনি রুম ভাড়া করার পুর্বে আলোচনা করে নিবেন ওই হোটেলে কয়টা থেকে সময় কাউন্ট করা শুরু হয়। অন্যথায় হোটেল মালিকরা আপনার কাছে থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার চেষ্টা করতে পারে।
আবাসিক হোটেল ভাড়া
আমরা ঢাকায় কম দামে আবাসিক হোটেল কোথায় এবং কিভাবে ভাড়া করবেন সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করার পূর্বে চলুন দেখে নেয়া যাক আবাসিক হোটেল ভাড়া কেমন হয়। অর্থাৎ এক রাতের জন্য কোন একটি আবাসিক হোটেলে থাকলে আপনার কত খরচ আসতে পারে। আবাসিক হোটেল ভারা কিছুটা নির্ভর করে হোটেল টি কোথায় অবস্থিত এবং হোটেলের কোয়ালিটি কেমন। তবে সাধারনত বর্তমানে ডাবল বেডের এক রুম এক রাতের জন্য ভাড়া করলে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা খরচ হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে ৩০০ টাকার কমেও রুম পাওয়া যায়। কিন্তু মোটামুটি ভালো মানের একটি আবাসিক হোটেল ডাবল বেডের এক রুম ভাড়া করতে গেলে প্রতিরাত ৩০০ টাকা করে ভাড়া আসবে।
ঢাকায় আবাসিক হোটেল ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে আরেকটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে তা হলো ভাড়া নেয়ার পূর্বে অবশ্যই একবার রুম দেখে আসবেন। নয়তো আপনাকে মুখে এক রকম বলবে আর ভাড়া নেয়ার পর অন্য রুমে থাকতে বাধ্য করতে পারে। এছাড়া ভাড়া যদি বেশি মনে হয় তাহলে অবশ্যই দামাদামি করবেন। কারন বেশিরভাগ হোটেল মালিক যদি বুঝতে পারে আপনি প্রথমবার ভাড়া নিতে এসেছেন তাহলে ভাড়া বেশি চাইবে। তাই লজ্জা না পেয়ে ভাড়া বেশি মনে হলে অবশ্যই দামাদামি করবেন।
এয়ারপোর্ট আবাসিক হোটেল
এয়ারপোর্ট এলাকায় অনেকের ই এক দুই রাত থাকার প্রয়োজন পড়তে পারে। সাধারনত অন্যান্য এলাকার তুলনায় এয়ারপোর্ট এলাকায় হোটেল ভাড়া কিছুটা বেশি তাও আমরা দুইটা হোটেল ঠিক করেছি আপনাদের সুবিধার জন্য। এই দুইটি হোটেলে মোটামুটি কম খরচে ভালো সার্ভিস পাবেন।
তাজ গার্ডেন হাউজ: তাজ গার্ডেন হাউজ হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরের খুবই কাছে এবং কম টাকায় ভালো সার্ভিস দেয়ার জন্য খুবই সুপরিচিত। এই হোটেল টির বিশেষত্ব হচ্ছে এটির খরচ এর তুলনায় এর সার্ভিস কোয়ালিটি খুবই ভালো। এই হোটেলে এক রাত থাকতে আপনার খরচ পড়বে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। বেশ কয়েক ধরনের রুম আছে তাই রুমের কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে খরচ কিছুটা কম বেশি হতে পারে। ১০০০ টাকায় আপনি একটি ডাবল বেডের বড় রুম, এটাস্ট বাথরুম, বারান্দ, ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন। অনলাইনে বুকিং দেয়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন
হোটেল লাব্বাইক: হোটেল লাব্বাইক এয়ারপোর্ট এলাকার আরেকটি নামকরা আবাসিক হোটেল। এই আবাসিক হোটেলে রাতের জন্য আপনার খরচ পড়বে ১০০০ টাকার মত। এটি এয়ারপোর্ট থেকে খুবই কাছে। এয়ারপোর্ট থেকে উবারে যেতে মাত্র ১০০ টাকার মত খরচ হবে। ১০০০ টাকায় আপনি একটি ডাবল বেডের রুম, বারান্দা, বাথরুম ও এসি রুম সহ ভালো আবাসিক হোটেলের সব সুবিধা পেয়ে যাবেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় হোটেলটি তে বিভিন্ন ছাড় ও অফার চলে। সেক্ষেত্রে আপনি আরো কমদামে রুম ভাড়া পেয়ে যাবেন আশা করা যায়।
কল্যানপুর আবাসিক হোটেল
শ্যামলি কল্যানপুরে দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে মানুষ বাসে বিভিন্ন কাজে ঢাকায় আসে। কাজের প্রয়োজনে অথবা ডাক্তার দেখানোর জন্য আপনার যদি শ্যামলি কল্যানপুর এলাকায় থাকা লাসে সেক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি আবাসিক হোটেল এর নাম ও ঠিকানা আপনার জন্য দিচ্ছি। আশা করি আপনার উপকার হবে।
ওয়েস্ট পয়েন্ট আবাসিক হোটেল: এই হোটেলটি শ্যামলি বাস স্ট্যান্ড থেকে খুবই নিকটে। এই আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য প্রতিরাতের খরচ পড়বে ৫০০ টাকার মত। তবে এই আবাসিক হোটেলে বেশ কয়েক ধরনের রুম আছে যেমন এসি নন এসি। রুমের কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম কিছুটা কম বেশি হতে পারে। তবে আনুমানিক ৫০০ টাকার মধ্যে ডাবল বেডের বড় রুম পেয়ে যাবেন। গুগল ম্যাপে হোটেলের লোকেশন দকেহতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
হক ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেল: এই হোটেলটি ও শ্যামলি বাস স্ট্যান্ড থেকে কাছে এবং ইবনে সিনা হসপিটাল, শ্যামনি থেকেও নিকটে। আপনি যদি ডাক্তার দেখানোর জন্য শ্যামলিতে থাকেন সেক্ষেত্রে এই হোটেলটি আপনার জন্য ভালো একটি অপশন হতে পারে। এখানে থাকার জন্য প্রতিরাত আপনার খরচ পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মত। এই হোটেলের আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে এটি মেইন রোডের পাশে এবং এর আশে পাশে অনেক খাওয়ার হোটেল ও ঔষধের দোকান রয়েছে। তাই দিনে বা রাতে যেকোন সময় যেকোন প্রয়োজনে খুব সহজেই বের হতে পারবেন কোন সমস্যা ছাড়া। গুগল ম্যাপে লোকেশন দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
উত্তরা আবাসিক হোটেল
অনেকেই ব্যবসায়িক কাজে বা ডাক্তার দেখানোর জন্য উত্তরা এসে কয়েকদিন থাকার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাবে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়। আমরা নিচে উত্তরার ভালো একটি হোটেলের নাম দেয়ার চেষ্টা করছি যেখানে কম খরচে ভালো মানের সার্ভিস পাবেন।
হোটেল সিটি প্লেসেস: হোটেল সিটি প্লেসেস ঢাকার উত্তরা এলাকার একটি নামকরা আবাসিক হোটেল। উত্তরা আবাসিক এরিয়ার খুব নিকটে অবস্থিত হোটেলটি। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন উত্তরায় আবাসিক হোটেল ভাড়া তুলনামূলক একটু বেশি। এই হোটেলে এক রাত তাকতে আপনার খরচ হবে ১২০০ টাকার মত। এছাড়া সাথে ফ্রি নাস্তা, ফ্রি ওয়াইফাই, ফ্রি পার্কিং ইত্যাদি সুবিধা পাবেন। হোটেলের লোকেশন সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
যাত্রাবাড়ি আবাসিক হোটেল
যাত্রাবাড়িকে বলা হয় দক্ষিন অঞ্চলের মানুষের ঢাকার প্রবেশ দরজা। অর্থাৎ কুমিল্লা, চট্রগাম, নোয়াখালি থেকে শুরু করে অনেক এলাকার মানুষ বিভিন্ন কারনে যাত্রাবাড়ি হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে হয়। যাত্রাবাড়িতে থাকা খাওয়ার খরচ ঢাকার অন্যান্য এলাকার তুলনায় কিছুটা কম এবং এখানে অনেক হসপিটাল ও ডাক্তার থাকায় ঢাকার বাইরে থেকে এসে অনেক মানুষ যাত্রাবাড়ি থাকেন। যাত্রাবাড়িতে অনেক হোটেল পেয়ে যাবেন থাকার জন্য এবং রুম ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে এক রাত হয়ে যাবে।
যেহেতু যাত্রাবাড়িতে হোটেলের পরিমান অনেক বেশি এবং সব গুলো হোটেল কাছাকাছি মানের তাই আমরা স্পেসেফিক কোন হোটেলের নাম উল্লেখ করছি না। তবে চৌরাস্তার আশে পাশে অনেক হোটেল পেয়ে যাবেন এবং প্রতি রাতে খরচ পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
মতিঝিল আবাসিক হোটেল
মতিঝিলকে বলা হয় ঢাকার রাজধানী। অর্থাৎ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ন সব স্থাপনা ও অবকাঠামো মতিঝিলে অবস্থিত। আপনি যদি মতিঝিল শাপলা চত্ত্বর এর আশেপাশে কোন আবাসিক হোটেল ভাড়া করতে চান সেক্ষেত্রে প্রতি রাতের জন্য আপনার খরচ পড়বে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। তবে আপনি যদি একটু ভেতরে অর্থাৎ দৈনিক বাংলা মোড় কিংবা ফকিরাপুলের দিকে গিয়ে হোটেল ভাড়া করে সেক্ষেত্রে প্রায় অর্ধেক দামে অর্থাৎ ৫০০ টাকার মধ্যে হোটেল ভাড়া পেয়ে যাবেন।
তাই আপনি যদি ঢাকায় কম দামে আবাসিক হোটেল ভাড়া করতে চান তাহলে সবসময় চেষ্টা করবেন মেই রোডের পাশ থেকে রুম ভাড়া না করে একটু ভেতর থেকে রুম ভাড়া করতে। সেক্ষেত্রে আপনার খরচ অনেক কম পড়বে।
কম খরচে আবাসিক হোটেল ভাড়া
যারা ঢাকায় কম দামে আবাসিক হোটেল সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য এখন আমরা কম খরচে হোটেল ভাড়া করার টিপস শেয়ার করবো। ঢাকা শহরে সাধারনত প্রথমবার কেউ আবাসিক হোটেল ভাড়া করতে গেলে অনেক সময় হোটেল মালিকরা অনেক বেশি ভাড়া নিয়ে নেয়। সেক্ষেত্রে আপনি যদি কিছু ট্রিক ফলো করেন তাহলে আপনি কম খরচে আবাসিক হোটেল ভাড়া করতে পারবেন।
- প্রথমত মনে রাখবেন মেইন রোডের পাশে হোটেল ভাড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সাধারনত রাস্তার পাশে যে আবাসিক হোটেল গুলো থাকে সেগুলোর ভাড়া তুলনামূলক একটু বেশি থাকে। তাই চেষ্টা করুন রাস্তার পাশের হোটেল ভাড়া না করে একটু ভেতরের হোটেল ভাড়া করতে। সেক্ষেত্রে আপনার খরচ অনেক টাই কম হবে।
- হোটেলের পরিবেশ দেখুন। কিছু কিছু হোটেল আছে ডেকোরেশনের কারনে অতিরিক্ত চার্জ করে। তাই শুরুর দিকে চেষ্টা করুন বেশি আলিশান হোটেলে না গিয়ে কিছুটা সিম্পল হোটেল ভাড়া করতে। সেক্ষেত্রে আপনার খরচ কিছুটা কম হবে।
- দামাদামি করুন। অনেক সময় হোটেল মালিকরা অতিরিক্ত দাম চেয়ে বসে। তাই আপনার যদি মনে হয় হোটেলের রুমের তুলনায় ভাড়া অনেক বেশি তাহলে অবশ্যই দামাদামি করুন।
ভালো আবাসিক হোটেল চেনার উপায়
উপরে আমরা ঢাকায় কম দামে আবাসিক হোটেল ভাড়া করার কিছু নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আমরা দেখবো কিভাবে ভাড়া নেয়ার আগেই আপনি হোটেলের কোয়ালিটি সম্পর্কে আইডিয়া পাবেন।
- হোটেল ভাড়া নেয়ার পূর্বে হোটেলের রিসিপশন দেখুন। ভালো হোটেল গুলোর রিসিপশন পরিষ্কার ও সুন্দর হয়। তাই রিসিপশন দেখে আইডিয়া পেয়ে যাবেন ওই হোটেলের পরিবেশ কেমন হতে পারে।
- হোটেলের স্টাফদের আচরন লক্ষ করুন। সাধারনত ভালো হোটেলগুলোতে হোটেল স্টাফদের আচরন তুলনামূলক ভালো হয়। সেক্ষেত্রে স্টাফদের আচরন দেখে হোটেলের কোয়ালিটি সম্পর্কে ভালো আইডিয়া পেয়ে যাবেন।
- রুম ভাড়া করার পুর্বে রুম এবং বাথরুম ভালোভাবে চেক করুন। হোটেল ভাড়া করার পূর্বে রুম নিজে গিয়ে একবার চেক করে আসুন এবং বাথরুমের কোয়ালিটি যাছাই করুন। কারন ভালো হোটেল গুলোর বাথরুম পরিষ্কার থাকবে।
- ফ্রি ওয়াইফাই, এসি, টাইলস করা রুম, বারান্দ এইসব আছে কি না যাছাই করুন।
ঢাকায় কম দামে আবাসিক হোটেল
আমরা এতক্ষন চেষ্টা করেছি ঢাকায় কম দামে আবাসিক হোটেল নিয়ে বিস্তারিত আপনাদের একটা আইডিয়া দিতে। আশা করি পোষ্ট টি আপনাদের উপকারে এসেছে। ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ
রাজধানী ঢাকাতে জীবনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারনে আমাদের সবার ই আসতে হয়। কেউ হয়তো ডাক্তার দেখাতে আসেন আবার কেউ হয়তো চাকরি বা ব্যবসার কাজে ঢাকার আসেন। ঢাকায় আসার কথা চিন্তা করলে প্রথমে যে চিন্তা মাথায় আসে তা হলো থাকার যায়গা সমস্যা। অনেক সময় ঢাকায় আত্মীয় স্বজন থাকলেও রোগী নিয়ে থাকার মত যথেষ্ট যায়গা ও সুবিধা থাকে না। আজকে আমরা মূলত ঢাকার ঢাকায় কম দামে আবাসিক হোটেল ভাড়া করার নিয়ম ও খরচ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এছাড়া আমরা ঢাকার কয়েকটি কমদামি হোটেলের ঠিকানা ও খরচ উল্লেখ করার চেষ্ট করবো যেনো আপনি একটা আইডিয়া পেয়ে যান। চলুন তাহলে ঢাকায় কম দামে আবাসিক হোটেল নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।