নকুল কুমার বিশ্বাস জন্ম ডিসেম্বর ২, ১৯৬৫ মাদারীপুর , বাংলাদেশ জাতীয়তা বাংলাদেশী জাতিসত্তা বাঙালি নাগরিকত্ব বাংলাদেশ পেশা সঙ্গীত শিল্পী যে জন্য পরিচিত সঙ্গীত শিল্পী ধর্ম সনাতন পারিবারিক জীবন ১৯৬৫ সালে মাদারীপুর জেলার দত্ত কেন্দুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামের এক সংগীত পরিবারে জন্ম নকুল কুমার বিশ্বাসের। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে তাঁর অবস্থান পাঁচ।
মা-বাবা প্রয়াত সুরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও শ্রীমতী মঙ্গলী দেবী। স্ত্রী এবং দুই সন্তান পলক কুমার বিশ্বাস ও মেয়ে প্রত্যাশা বিশ্বাসকে নিয়ে নকুলের সুখের সংসার। গানের ভুবনে যাত্রা শুরু ১৯৭৫ সালে মেজভাই হীরালাল বিশ্বাসের হাত ধরে গোপালগঞ্জে আসেন তিনি। লক্ষ্য ছিল যাত্রাদল দীপালি অপেরায় শিশুশিল্পী হিসেবে একটা সুযোগ পাওয়া। সুযোগ মিলল তাঁর। শিশু নকুল অডিশনকক্ষে ছোট্ট আঙুলের ডগা দিয়ে হারমোনিয়ামে সুর তুলে মিষ্টি কণ্ঠে শুনিয়ে গেলেন একের পর এক গান। সেদিন নকুলের গান শুনে অবাক বনেছিলেন উপস্থিত সবাই! মাদারীপুরের ওস্তাদ রণজিৎ দাইয়ের কাছে হারমোনিয়ামে রাগ সংগীতের তালিম নেন নকুল। মাত্র ছয় মাসেই এটা আয়ত্ত করেন এবং প্রধান হারমোনিয়াম মাস্টার হিসেবে একটি স্কুলে শিক্ষক নির্বাচিত হন।
গুরু আশু মিয়ার কাছে বিখ্যাত সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্করের গল্প শুনতেন। মনে মনে ঠিক করলেন রবিশঙ্করের মতো বিখ্যাত হতে হবে। ১৯৮০ সালে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পকেটে মাত্র ৫০০ টাকা নিয়ে পাড়ি জমান কলকাতায়। ছোট্ট নকুল কলকাতায় এসে সুভাষ বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রখ্যাত সেতারবাদক ওস্তাদ মোস্তাক আলী খানের নাতি-শিষ্য শ্রী রণজিৎ বিশ্বাসের কাছে আসেন। তাঁর কাছে কিছুদিন সেতার শেখেন। সেখান থেকে ২৮০ টাকা দিয়ে কিনে নেন একটি সেতার। এরপর ফিরে আসেন দেশে। দেশে ফিরেই এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান, অভিনয়, নৃত্য দিয়ে মানুষের মন জয় করতে থাকেন।
আরও পড়ুন:Biography of Buddhist guru Dalai lama || বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাইলামার জীবন কাহিনী
১৯৮৩ সালে বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। আশ্রয় নেন ওস্তাদ আমানউল্লাহ খানের বাড়ির ভাঙা বারান্দায়। তাঁর কাছে কিছুদিন তালিমও নেন। সে বছরই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে উচ্চাঙ্গসংগীতের এক আসরে এককভাবে হারমোনিয়াম বাজানোর সুযোগ পান। উপস্থিত সবাই তাঁর পরিবেশনায় মুগ্ধ হন। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁকে কেন্দ্রের ফান্ড থেকে এক হাজার টাকা পুরস্কারও দেন। এরপর বেতারে চাকরি হয় তাঁর। কিন্তু চাকরিতে তাঁর মন বসলো না।
১৯৮৬ সালে তিনি আবারও গ্রামের বাড়িতে চলে যান এসএসসি পরীক্ষা দিতে। ওই সময় এক কবিয়ালের কিছু গান সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করেন তিনি। কিন্তু কবিয়াল গান না দিলে অভিমান হয় তাঁর। নিজেই লেখা শুরু করেন। সেই থেকে আজ অবধি অন্য কারো লেখা গান করেননি তিনি। এসএসসি পাস করে পরের বছর আবার আসেন ঢাকায়। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এন্টারপ্রাইজের ব্যানারে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘ভাগবত পড়ে ভগবানকে পাইছোনি’। অ্যালবামটি হিট হয়। একই সঙ্গে গান ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। ১৯৯৬ সালে ‘ইত্যাদি’তে প্রচারিত হয় তাঁর গাওয়া ‘দাদা বিয়া করলাম ক্যান’ গানটি।
এই গানটি তাঁকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এরপর টানা দশ বছর তিনি ইত্যাদিতে জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে জীবনমুখী গান নিয়ে হাজির হয়েছেন। এর মধ্যে কলকাতার অডিও বাজারে লাগে নকুলের গানের ঢেউ। কলকাতার অডিও কোম্পানি জেএমডি থেকে ২০০১ সালে প্রকাশিত হয় নকুলের ‘নদীয়ান নকুল’ এবং ২০০৩ এএসডি অডিও কোম্পানির ব্যানারে প্রকাশিত হয় ‘চাকরি নাই বুড়ো বাবার’ নামে আরেকটি অ্যালবাম। ভারত-বাংলাদেশ সব মিলিয়ে তাঁর প্রায় অর্ধশত অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। কর্ম জীবন মাত্র আট বছর বয়সে যাত্রার দলে শিল্পী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গীতের ক্যারিয়ার শুরু।
সেই থেকে যাত্রাসহ গ্রাম ও শহরাঞ্চলে বহু অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছেন তিনি। গানের পাশাপাশি তিনি সেতার, তবলা, বাঁশি, সরোদ, সন্তুর, দোতারা, ও ম্যান্ডালিনসহ আরো নানারকম বাদ্য যন্ত্রে পারদর্শী, বিশেষ করে হারমোনিয়াম বাজানোতে রয়েছে তাঁর বিশেষ দক্ষতা। বাংলাদেশ বেতারে যন্ত্র ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে চাকরি করেছেন অনেকদিন। তবে ক্যারিয়ারে তাঁর সবসেরা সুযোগটি আসে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ‘ইত্যাদি’ তে গান পরিবেশনের সুবাদেই শ্রোতা-দর্শকদের কাছে তাঁর সর্বাধিক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পরে। তার কাজ সংগীতাঙ্গনের পরিচিত মুখ নকুল কুমার বিশ্বাস।
Read More: Chanakya Biography
তিনি একাধারে কণ্ঠশিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গীতিকার। একের পর এক তুমুল জনপ্রিয় অ্যালবাম বের হয়েছে তার। ১৯৮৭ সালে রমজানের ঈদে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এন্টারপ্রাইজ থেকে নকুলের সঙ্গীত ক্যারিয়ারের প্রথম একক অ্যালবাম ‘কনকর্ড ভলিউম-১’ প্রকাশিত হয়। বের হয় এক এক করে ৫০টি অ্যালবাম। ছন্দে ছন্দে কথা বলা ও উপস্থাপনায় নকুল কুমারের কোনো বিকল্প এদেশে নেই।
ছন্দ আনন্দ অনুষ্ঠানটি তার প্রমাণ। টেলিভিশন রেটিং পয়েন্টে সব ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেছে এ অনুষ্ঠান। আর `ছন্দ আনন্দ` উপমহাদেশের প্রথম অনুষ্ঠান যার পুরোটাই ছন্দে সাজানো। উল্লেখযোগ্য গান সমূহ চাচায় চা চায় এই আমার পকেটে আছে মানুষটা পাঁচ ফিট হ্যালো হ্যালো মাই ডিয়ার মাগো তুমি যেন না কাঁদো পাঁচতলার ঐ চিলেকোঠায় ভালো হইতে পয়সা লাগে না
ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।