এখন তো তরুণদের হাতে হাতে স্মার্টফোন। ইন্টারনেট, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ভিডিও গেম থেকে শুরু করে হাজার রকমের ডিজিটাল পদ্ধতি নিয়ে ওরা এখন দিনরাত ব্যস্ত। সারাক্ষণ মুঠোফোনের বোতাম টিপছে। অভিভাবকেরা চিন্তিত, মুঠোফোনে আকৃষ্ট হয়ে ওদের চোখ নষ্ট তো হবেই, এমনকি মাথাও নষ্ট হতে পারে। লেখাপড়ার তো বারোটা বাজবেই! কিন্তু বাস্তবে অবস্থা ততটা খারাপ নয়। এটা ঠিক যে নেশার মতো মুঠোফোনে আকৃষ্ট হলে কিছু ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু ভিডিও গেম বা এ ধরনের সফটওয়্যারে কিছু সময় ব্যস্ত থাকলে মস্তিষ্কের উন্নতিও হয়। বয়স্ক অভিভাবকেরা হয়তো অবাক হবেন।
রুবিকস কিউব মেলানোর প্রতিযোগিতাও তরুণদের চিন্তাশক্তিকে সুতীক্ষ্ণ করে। মাত্র কয়েক মিনিটে রুবিকস কিউব মেলানো যে-সে কথা নয়। ঢাকারই এক তরুণ চোখ বন্ধ করে রেখে কয়েক মিনিটের মধ্যে রুবিকস কিউব মেলাতে পারে! এসব খেলার মাধ্যমে মস্তিষ্ক ‘মাল্টিটাস্কিং অ্যাবিলিটি’ বা একই সময়ে একাধিক বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার সক্ষমতা অনেক গুণ বেড়ে যায়। ফলে, তরুণেরা পড়াশোনা থেকে শুরু করে যেকোনো জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক বেশি পারদর্শী হয়। সব বিষয় সে চৌকস হয়ে ওঠে। একজন কলেজছাত্রের দক্ষতা যাচাই করে দেখা গেছে, এ ধরনের চর্চার ফলে সে অন্যদের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি বিষয় মনে রেখে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়লে এই উপকারটুকু হয়তো পাওয়া যাবে না। আজকাল ইউরোপ-আমেরিকায় স্কুলের ক্লাসে শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে তিন থেকে চারটা কাজ করে থাকে। যেমন শিক্ষকের লেকচার শোনা ও প্রয়োজনীয় নোট লেখা, একই সঙ্গে ফেসবুক চেক করা, আবার কানে কর্ডলেস এয়ারফোনে গান শোনা। শিক্ষক সহজে ধরতে পারেন না, কারণ সব কাজই দক্ষতার সঙ্গে করে শিক্ষার্থীরা। এটা শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সাহায্য করে।
করোনার একটি উপসর্গ হলো খাবারের গন্ধ বা স্বাদ কিছুই বুঝতে না পারা। অথচ সুস্থ অবস্থায় সে পোলাও-কোর্মা খুব মজা করে খায়। তাহলে করোনা হলে এই স্বাদ কোথায় যায়? আসলে স্বাদ থাকে, কিন্তু জিব সেটা টের পায় না। কারণ, স্বাদ গ্রহণের সূক্ষ্ম স্নায়ুকোষগুলো থাকে জিবে। করোনায় আক্রান্ত হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওগুলো সাময়িকভাবে অকার্যকর হয়ে যায়। কয়েক সপ্তাহ পর অবশ্য স্বাদ আবার ফিরে আসে। জিবের স্বাদ গ্রহণের সক্ষমতার বিষয়টি খুব মজার। অনেক সময় জিব আমাদের বিভ্রান্ত করে। যেমন ডায়াবেটিসের রোগীদের অনেকে ডায়েট সোডা পান করেন, কারণ ওই পানীয়তে চিনি থাকে না। তাহলে মিষ্টি হয় কীভাবে? আর মিষ্টিই যদি হবে, তাহলে চিনি বা ওই জাতীয় কিছু ছাড়াই কীভাবে মিষ্টি হয়? আসলে ডায়েট সোডায় এমন একধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে, যাকে বলা যায় ‘কৃত্রিম চিনি’।
এটা ডায়াবেটিসের জন্য ক্ষতিকর নয়, কিন্তু জিবের স্বাদ গ্রহণের স্নায়ুকোষগুলোকে উজ্জীবিত করে। তখন জিব থেকে মস্তিষ্কে খবর যায়, পানীয়টা মিষ্টি। আমরাও নির্ভয়ে ডায়েট সোডা পান করি। বিশ্বজোড়া এর চাহিদা। আজকাল আমাদের অনেকেই ডায়াবেটিস না থাকলেও ডায়েট পানীয় বেশি পছন্দ করি। চিনিযুক্ত পানীয় ও ডায়েট সোডার মধ্যে পার্থক্য মানুষের জিব ধরতে পারে না। কিন্তু কিছু প্রাণী ঠিকই ধরতে পারে। যেমন ইঁদুর। মিষ্টিজাতীয় পানীয় ইঁদুর খুব পছন্দ করে। কিন্তু অবাক ব্যাপার, ওরা ডায়েট পানীয় পছন্দ করে না। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় দেখা গেছে। একটু চেখে স্বাদ নেয়, তারপরই চলে যায়। তার মানে শুধু অপছন্দ করে, তা-ই নয়, খাওয়ার অযোগ্য মনে করে। এ তো অভাবনীয়। যে ইঁদুর কাগজ-কাপড় কুচি কুচি করে কাটতে ওস্তাদ, যেকোনো খাবার খেতে যার জুড়ি নেই, সে কেন মিষ্টি ডায়েট পানীয় খেতে চায় না? এর কারণ কী? সাধারণ চিনি মেশানো পানীয় ও ডায়েট পানীয়—দুটিই তো সমান মিষ্টি, তাহলে ডায়েটে ইঁদুরের বিতৃষ্ণা কেন? বিষয়টি বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ইঁদুরের মুখে চিনির মিষ্টির স্বাদ গ্রহণের উপযুক্ত স্নায়ুকোষ রয়েছে। কিন্তু ডায়েট সোডায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের স্বাদ গ্রহণের সক্ষমতা তো নেই-ই, উপরন্তু ওই সোডা ইঁদুরের মুখে বিস্বাদ লাগে। তাই ডায়েট সোডা মানুষকে ফাঁকি দিতে পারলেও ইঁদুরকে ফাঁকি দিতে পারে না।