Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
মালির সুলতান পৃথিবীর সর্বকালের সেরা ধনী

মালির সুলতান পৃথিবীর সর্বকালের সেরা ধনী

আমরা যখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের কথা ভাবি, তখন ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, বিল গেট্স এবং গৌতম আদানিদের নাম মনে আসতে পারে। মার্কিন ব্যবসায়ী জন ডি. রকফেলার, কর্নেলিয়াস ভ্যান্ডারবিল্ট, হেনরি ফোর্ড এবং রাশিয়ান রোমানভ রাজপরিবারের মতো আরো কিছু বিখ্যাতরাও অঢেল সম্পদের মালিক। কিন্তু ইতিহাসে এমন একজন ব্যক্তি আছেন, যিনি দুনিয়ার বুকে সর্বকালের সেরা ধনী হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন। শুধু আজকের প্রযুক্তি যুগের এবং শিল্প যুগের বিলিয়নেয়ারদেরই নয়, ইনি অগাস্টাস সিজার (৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার), উইলিয়াম দ্য কনকোয়ারার (৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং সম্রাট আকবরের মতো বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসকদেরও পেছনে ফেলে দিয়েছেন। কে এই ব্যক্তি, যিনি পৃথিবীর সর্বকালের সব থেকে ধনী? ইতিহাসবিদদের মতে, বিশে^র সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম মানসা মুসা কিইতা বা সুলতান মুসা কিইতা।

১৪৪ ধারা ভেঙে গোপালগঞ্জে কীর্তনের আয়োজন, সংঘর্ষের শঙ্কা
সুলতান মুসা ছিলেন ১৪ শতকের পশ্চিম আফ্রিকার শাসক। বিবিসি মতে, তার সম্পদের পরিমাণ ছিল বর্ণনাতীত এবং কল্পনাতীত। আফ্রিকার আদি গোষ্ঠী মান্দিঙ্কাদের ভাষায়, ‘মানসা’ মানে সুলতান বা সম্রাট। আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের মুসলিম কিইতা রাজবংশের শাসনামলে ১২৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে মুসা কিইতা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৩১২ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতা গ্রহণ করেন, যখন তার ভাই মানসা আবু-বকর একটি অসামান্য অভিযানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিংহাসন ত্যাগ করেন। ইতিহাসবিদ শিবাব আল-উমারির মতে, আবু-বকর সর্বদা আটলান্টিক মহাসাগরের প্রতি মুগ্ধ ছিলেন এবং সেই আমলে প্রায় ২ হাজার জাহাজের একটি বহর, হাজার হাজার নারী-পুরুষ এবং ক্রীতদাস তিনি আটলান্টিক অভিযানে গিয়েছিলেন, কিন্তু আর ফিরে আসেননি।
আবু বকরের পর মানসা মুসা পশ্চিম আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের নবম সুলতান হয়ে ওঠেন, যা তার আরোহণের সময় ইতোমধ্যেই খুব ধনী বলে বিবেচিত ছিল। তার রাজ্য লবণ, স্বর্ণ ও অবারিত উর্বর ভূমিতে সমৃদ্ধ ছিল। ইসলামভক্ত মুসা মক্কায় তীর্থযাত্রায় তার সাথে প্রচুর সোনা নিয়ে আসেন। ইতিহাসবিদরা অনুমান করেন যে, মালি সাম্রাজ্য সেই সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণ উৎপাদক ছিল, যা বিশ্বের মোট সরবরাহের অর্ধেকেরও বেশির মালিক ছিল। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের মতে, মুসা সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে এই অঞ্চলে বাণিজ্য সম্প্রসারণ কাজের জন্য রাজ্যটি অসাধারণভাবে বিস্তৃত হতে থাকে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লবণ ও স্বর্ণের খনি এবং সেইসাথে হাতির দাঁতের ব্যবসার মাধ্যমে তার সম্পদ আকাশচুম্বী হতে থাকে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক যেমন বলেছে, এটা শুধু লবণ এবং স্বর্ণই নয়, যা মুসার সম্পদে অবদান রেখেছিল, কথিত আছে যে, তিনি সেই মহান শাসক যিনি কখনও কোনো যুদ্ধে পরাজিত হননি এবং অনেক ক্ষেত্রে, জীবনযাত্রার উচ্চতর মানের কারণে অঞ্চলগুলো স্বেচ্ছায় মালি সাম্রাজ্যে যোগ দিয়েছিল। তার সাম্রাজ্যটি অত্যধিক প্রবৃদ্ধির কারণে খুব সহজেই আটলান্টিক মহাসাগর থেকে আধুনিক দিনের নাইজার পর্যন্ত তিমবাকতুসহ ২৪টি শহরকে সংযুক্ত করে ৩ হাজার কিলোমিটার (১ হাজার ৮শ’ ৬৪ মাইল) সম্প্রসারিত হয়েছিল। এসব একজন সফল শাসক হওয়ার পাশাপাশি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন।

সুলতান মুসা ১৩২৪ থেকে ১৩২৫ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৫শ’ কিলোমিটার মরুভূমি পাড়ি দিয়ে মক্কায় হিজরত করেন। ম্যাগনেটস মিডিয়া বলছে যে, পশ্চিমা ইতিহাস বিশেষজ্ঞরা তার এ হিজরতকে এখন ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে অসামান্য তীর্থযাত্রা’ হিসাবে উল্লেখ করে।
বিবিসি জানিয়েছে, সেসময় সুলতান মুসা রাজকীয় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উটচালক এবং ক্রীতদাসসহ প্রায় ৬০ হাজার নর-নারী নিয়ে মক্কার উদেশ্যে মালি ত্যাগ করেন। ক্রীতদাসসহ এসব ভ্রমণকারীর বেশিরভাগই মাথা থেকে পা পর্যন্ত ফার্সি সিল্ক এবং স্বর্ণ দিয়ে বোনা ব্রোকেডে আচ্ছাদিত ছিল। প্রায় ১শ’ উট খাঁটি সোনার ব্যাগ বহন করছিল। এ যাত্রার মাধ্যমে মুসা এবং তার সঙ্গীরা সাহারা মরুভূমি এবং মিসর দিয়ে কায়রোতে পৌঁছেছিলেন, যেখানে তিনি উদারহস্তে তার নগদ মুদ্রা ও স্বর্ণ ব্যয় এবং দান করেছিলেন। তিনি এত বেশি স্বর্ণ খরচ করেছিলেন যে, কায়রোর বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং তার চলে যাওয়ার পর সেখানে ১০ বছর ধরে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। সুদীর্ঘ ভ্রমণের অবিজ্ঞতা নিয়ে আফ্রিকাতে ফিরে আসার পর মুসা তার রাজ্যের শহরগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করাকে তার লক্ষ্যে পরিণত করেন। এ অঞ্চলের স্থাপত্য শিল্পে উন্নয়নের কারণে তার খ্যাতি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বিবিসি অনুসারে, সুলতান মুসা বহু স্কুল, লাইব্রেরি এবং মসজিদ তৈরি করেছিলেন এবং তিমবাকতুকে সংস্কৃতি ও শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সরাসরি বংশধর এবং আবু ইস-হাক-ইস-সাহেলি নামক একজন আন্দালুসিয়ান কবি ও স্থপতিসহ বিভিন্ন ইসলামিক পণ্ডিতদের সাথে কাজ করেছেন এবং তাদের প্রচেষ্টার জন্য তাদের ২শ’ কেজি স্বর্ণ পর্যন্ত পারিশ্রমিক প্রদান করেছেন। ১৩৩৭ সালে ৫৭ বছর বয়সে মুসা মারা যান এবং তার পুত্ররা তার স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মালি সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান অনুসারে, আধুনিক দিনের হিসাবে সুলতান মুসার সম্পদের সম্ভাব্য মোট মূল্য নূন্যতম ৪শ’ থেকে ৫শ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যদিও শুধুমাত্র স্বর্ণ, লবণ এবং জমির ওপর ভিত্তি করে তার সম্পদের পরিমাণ নির্ণয় করা খুব কঠিন। তবুও, মানসা মুসাকে শুধু তার সম্পদের পাহাড়ের জন্যই নয়, তার উদারতা এবং তার ইসলামী বিশ্বাসের প্রতি অঙ্গীকার, শিক্ষার প্রচার এবং তার সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক উন্নয়নে অর্থায়নের জন্যও স্মরণ করা হবে। সূত্র : লাক্সারি লঞ্চেস।

Leave a Reply