সনদ যার , চাকরি তার , এই শ্লোগানকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় কমিটি এনটিআরসিএ’র নিবন্ধিত শিক্ষকদের প্যানেলভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে আগামী ০৯ মার্চ ২০২২ ইং তারিখ আমরন অনশন কর্মসূচীর ঘোষনা করেছে । তাই সকল নিবন্ধনধারী প্যানেল প্রত্যাশি বন্ধুগনকে উপস্থিত থাকার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এটিআরসিএ) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক নির্বাচন করা। ২০০৬ সালের ৩০ জুলাই গেজেট পাস করে মন্ত্রণালয়। তখন সনদের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। ফলে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সনদ পেলেও নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল।
তারা বলেন, ২০১৩ সালের ২০ মে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সনদের মেয়াদ আজীবন করা হয়। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া তখনও ছিল ম্যানেজিং কমিটির হাতে। নামমাত্র পরীক্ষা নিয়ে নিজেদের মনোনীত প্রার্থীকে এগিয়ে রাখা হতো। নিবন্ধন সনদ কোনো বিষয় ছিল না। মূল যোগ্যতা ছিল যোগাযোগ ও টাকা। এছাড়াও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বরাবর নিয়োগ পরীক্ষার নামে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন ফি বাবদ বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে পাশ হয় নতুন গেজেট। সেখানে সব প্রক্রিয়া শেষে এককভাবে প্রার্থী নির্বাচন করে শূন্য পদে নিয়োগের সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয় এনটিআরসিএ। অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি বন্ধের উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুপারিশের ক্ষমতা দেয় এনটিআরসিএর হাতে।
নিবন্ধন পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েও নিয়োগবঞ্চিতরা আরও বলেন, নতুন গেজেট দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ও নিয়োগে বঞ্চিত হয়ে ১-১২তমদের কিছু অংশ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে রিট করেন। এতে আটকে যায় ১৩তমদের নিয়োগ সুপারিশের কার্যক্রম। ১৩তমদের একদল আন্দোলন করে, আদালতের দ্বারস্থ হন এবং রিট করেন। ২০১৬ সালের গণবিজ্ঞপ্তিকে প্রথম চক্র ধরে নিয়োগের সুপারিশ কার্যক্রম চালু হয়। এদিকে ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এনটিআরসি এর বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৬৬টি রিটের নিষ্পত্তি করে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য সাত দফা নির্দেশনা দেন। তবে রায়ের ৭নং ধারায় বলা ছিল- বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নির্ধারণ করতে শিগগির পদক্ষেপ নেবে সরকার। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে এনটিআরসিএর দেওয়া ২০১৮ সালের গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয় না। ফলে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হন ১-১২তমদের ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নিবন্ধনধারীরা। এরপর আবার আদালতের রায়ে ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নিবন্ধনধারীদের তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়। এভাবে এনটিআরসএর অব্যবস্থাপনা ও অদূরদর্শিতার কারণে নিবন্ধনধারীরা বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন তারা।
এ অবস্থায় শিক্ষক সংকট দূর করতে প্যানেল ভিত্তিক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে বক্তারা বলেন, মুজিব বর্ষের উপহার স্বরূপ একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি হতে পারে এর সমাধান। সেখানে প্যানেলভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিয়োগবঞ্চিতদের নিয়োগের দাবি জানান তারা। এক্ষেত্রে নিবন্ধন পরীক্ষা বন্ধ রেখে প্যানেলভিত্তিক নিয়োগ এখন সময়ের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি বলে জানান তারা।
এসময় তিন দফা দাবি তুলে ধরেন বক্তারা। দাবিগুলো হলো-
১. এক আবেদনে সব নিবন্ধনধারী চাকরি প্রত্যাশীদের কোটাবিহীন প্যানেলভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে।
২. সব নিবন্ধনধারীদের স্ব স্ব নীতিমালায় নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হবে।
৩. নিবন্ধনধারীদের গণবিজ্ঞপ্তির অন্তর্ভুক্ত না করে আলাদা বদলির ব্যবস্থা করতে হবে।
মানববন্ধনে প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি আমীর আসহাব, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম আকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক জি এম ইয়াসিন, ঢাকা বিভাগের আহ্বায়ক তানিয়া সুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে এবার বেশ কিছু পরিবর্তন
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে এবার বেশ কিছু পরিবর্তন। বৃহস্পতিবার দুপুরে এনটিআরসিএ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, এদিন সকালে টেলিটকের সাথে বৈঠকে বসে এনটিআরসিএ। বৈঠকে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ, শূন্য পদের তথ্য, আবেদন প্রক্রিয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন কর্মকর্তারা। এতে বেশ কিছু পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির আদলে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করারও সুপারিশ করা হয়েছে ওই সভায়।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কাজ শুরু করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এ লক্ষ্যে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাথে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বৈঠক করেছে এনটিআরসিএ। বৈঠকে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে বেশ কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এখনো কয়েকটি জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তারা তাদের তথ্য পাঠায়নি। এই তথ্য পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছ থেকে শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এনটিআরসিএ।
শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহের পর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তবে এই প্রক্রিয়া কোন মাসে শেষ করা হবে সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এনটিআরসিএ’র এক কর্মকর্তা জানান, ‘চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে একটি স্ট্রাকচার তৈরি করা হবে। এই কাঠামো অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। কাঠামোতে নতুন অনেক কিছু যুক্ত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি যেভাবে হয়েছে সেভাবে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি হবে না বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।’
নতুন শিক্ষাক্রম পাইলটিং : এক শাখায় সর্বোচ্চ ৭০ শিক্ষার্থী
প্রসঙ্গত, মুজিব শতবর্ষে বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন নিবন্ধিত প্রার্থীরা। সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে অনশন কর্মসূচিও পালন করেন তারা। প্রেসক্লাবের ওই অনশন কর্মসূচি শেষে এনটিআরসিএর সামনে অনশন পালন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। এনটিআরসিএর অনশন চলাকালীন আন্দোলনরতদের একটি প্রতিনিধি দল এনটিআরসিএর চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। চেয়ারম্যানের আশ্বাসে পরবর্তীতে অনশন স্থগিত করেন তারা।