বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনে পোশাক শ্রমিকরা, আহত ১০

তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রায় তিন ঘণ্টা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করেছে রূপসী গার্মেন্টের শ্রমিকেরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলির ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার শিবু মার্কেট এলাকার সড়কে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, ‘সকাল ৯টায় সদর উপজেলার লামাপাড়ায় রূপসী গার্মেন্টেসের সামনে বেতনের জন্য অপেক্ষা করে শ্রমিকেরা। সকাল ১০টায় কারখানার কর্তৃপক্ষ আজকে বেতন দেওয়া হবে না ঘোষণা দিলে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকেরা। এক পর্যায়ে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে এসে ট্রাফিক পুলিশের রোড ডিভাইডার পিলার ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের উভয় পাশের রাস্তার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তৈরি হয় তীব্র যানজট।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ফতুল্লা থানা ও শিল্প পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ ও জলকামান রাখা হয়। দুপুর দেড়টায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জোতিময় সাহা ওই গার্মেন্টের মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এক মাসের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে অধিকাংশ শ্রমিক রাজি হয়ে সড়ক থেকে সরে যেতে চাইলেও কিছু শ্রমিকের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা হয়।

এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। আর শুরু হয় শ্রমিক পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। তখন সড়ক থেকে সরে যায় শ্রমিকেরা। প্রায় আধা ঘণ্টা সংঘর্ষের পর দুপুর ২টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।’ শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন বকেয়া আছে। গত ২০ মার্চ দুই মাসের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছিল মালিক পক্ষ।

বলুন তো ছবিটি কোনো নারী না পুরুষের, উত্তরই বলে দেবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন

তারপর একাধিক বার সময় দিয়ে সবশেষ আজকে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেয়। কিন্তু আমরা সকালে কারখানায় যাওয়ার পর মালিক পক্ষ জানায় আজকেও বেতন দিবে না। চলতি মাসও শেষ। তিন মাসের বেতন বকেয়া হয়েছে, তাই আমরা আন্দোলন করতে বাধ্য হই।’ শ্রমিকরা বলেন, ‘আমরা সড়ক অবরোধ করে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। কোনও ভাঙচুর করিনি। কিন্তু পুলিশ আমাদের উপর লাঠিচার্জ শুরু করে। আমাদের সাত জন শ্রমিক আহত হয়েছে।’ শ্রমিক ফারজানা বলেন, ‘তিন মাসের বকেয়া বেতনসহ বাৎসরিক ছুটি, ওভারটাইম, নাইট বিল বকেয়া রয়েছে।

তাছাড়া বেতন চাইতে গেলেই শ্রমিকদের ছাঁটাই করে দেয়। মালিকপক্ষের সন্ত্রাসীরা রাস্তায় হুমকি ধমকি দেয়, মারধর করে। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলন করছি। আন্দোলন না করলে কেউ আমাদের জন্য এগিয়ে আসে না।’ আশা বলেন, ‘একে একে তিন মাস পেরিয়ে গেছে। এখনও আমাদের বেতন দেয় নাই। বাকি করে আর কতদিন চলা যায়। বাড়ির পাশের মুদি দোকানে অনেক বাকি হয়েছে। বাড়িওয়ালা ভাড়ার টাকা পাবে। কে কত দিন সহ্য করবে।’ নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) মো. আমীর খসরু বলেন, ‘বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে।

এ সময় তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে পুলিশ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়। তবে সেটা কত রাউন্ড ছিল শিল্প পুলিশ বলতে পারবে। এ বিষয়ে তারাই কাজ করছে। শিল্প পুলিশই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জোতিময় সাহা বলেন, ‘আমরা মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা আগামী রবিবার (৩ এপ্রিল) শ্রমিকদের এক মাসের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেয়। আমরা সেটা শ্রমিকদের বলার পর কিছু শ্রমিক অবরোধ তুলে নিয়ে যেতে শুরু করে। কিন্তু কিছু শ্রমিক দাবি জানায়, মালিক পক্ষের লোকজন এসে আশ্বাস দিতে হবে। এজন্য পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়।

Microsoft (মাইক্রোসফট) PowerPoint (পাওয়ার পয়েন্ট) দ্বারা কি কি কাজ করা যায়?

এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়। কত রাউন্ড এখনই বলা যাচ্ছে না। কোনও শ্রমিক আহত হওয়ার কোনও খবর পাইনি। তবে ইটপাটকেলের আঘাতে আমিসহ তিন জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। অবশ্য কারও অবস্থাই গুরুতর নয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ রূপসী গার্মেন্টসের সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘শ্রমিকেরা শুধু ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাবে। আর কোনও বকেয়া নেই। আজকে ব্যাংক থেকে টাকা পাচ্ছিলাম না। তাই ফেব্রুয়রির বেতন আগামী ৭ এপ্রিল দিবো বলেছিলাম। কিন্তু শ্রমিকেরা তাতে রাজি হয়নি। এর আগে কখনও এমন হয়নি। আজকেই কারও ইন্ধনে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। আগামী শনিবারের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করে দেওয়া হবে।’

এদিকে সড়ক অবরোধ করার ফলে শহরের চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের উভয় পাশে সৃষ্টি হয় যানজট। এতে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্সসহ যাবতীয় গাড়ির চাকা থেমে যায়। যানজটে কারণে অনেকে যাত্রীকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়েছে।’ ঢাকার মিরপুরগামী হিমাচল পরিবহনের বাস চালক মো. শাহীন বলেন, ‘তিন ঘণ্টা ধরে যানজটে বসে ছিলাম। যাত্রীরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে চলে গেছে।’ যাত্রী পারভীন আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি। তাকে দেখতে যাচ্ছি। কিন্তু যানজটের জন্য দুই ঘণ্টা ধরে গাড়িতেই বসে আছি। না পারছি ঢাকায় যেতে, না পারছি বাসায় ফিরে যেতে।’

Leave a Reply