যুদ্ধবিমানও পাচ্ছে ইউক্রেন

রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-ঘনিষ্ঠ ধনকুবেরদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাদের নাগরিকদের সম্পদ জব্দ করা হচ্ছে। এখন হুমকিতে পড়েছেন দেশটির অভিজাত ধনকুবেররা। আর্থিক লেনদেনের বৈশ্বিক ব্যবস্থা সুইফট থেকে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বাদ দেওয়া হয়েছে। মাইক্রোসফট, স্যামসাংসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান রাশিয়া থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। সর্বশেষ গতকাল রোববার স্বয়ংক্রিয় লেনদেন-ব্যবস্থা ভিসা ও মাস্টার কার্ড রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।

পশ্চিমাদের হুমকি ও বৈরিতা সত্ত্বেও ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। গতকাল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে তিনি বলেছেন, কেবল ইউক্রেন লড়াই বন্ধ করলে এবং মস্কোর দাবিগুলো মেনে নিলেই রাশিয়া সামরিক অভিযান বন্ধ করবে।

এদিকে রাশিয়া বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে ফোনালাপে বলেছেন, এই সংঘাতকে উসকানি দেয় এমন যেকোনো কিছুর বিরুদ্ধে বেইজিং। সংকট সমাধানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি সমঝোতা আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর গুরুতর প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। শনিবার এক বিবৃতিতে আইএমএফ বলেছে, ইতিমধ্যে অর্থনীতিতে এর বড় প্রভাব পড়েছে। সংঘাত বাড়লে অর্থনৈতিক ক্ষতি আরও বিপর্যয়কর হবে।

আইএমএফের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি চলছিল। তার মধ্যে জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এখন রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরও বড় পরিসরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে যেসব দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড রয়েছে, তাদের ওপর বড় আঘাত আসবে। এ ছাড়া শরণার্থী সংকট সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায় ৪ সপ্তাহ স্থগিত

কিয়েভের কাছে তুমুল লড়াই

গতকাল রুশ বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলের ভিনিতসিয়া বিমানবন্দর ধ্বংস হয়েছে বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভিনিতসিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। নিক্ষেপ করা হয়েছে আটটি রকেট। বিমানবন্দরটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইউক্রেনে দুই পক্ষের লড়াইয়ের নতুন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে রাজধানী কিয়েভের ২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের শহর ইরপিন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পরই ইরপিনের কাছের হোস্টোমেল বিমানঘাঁটি দখলে নিয়েছিল। পরে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা লড়াই হয়। কিয়েভের দিকে রাশিয়ার বিশাল যে সেনাবহর (৪০ মাইল সড়কজুড়ে থাকা) এগোচ্ছে, তার অগ্রভাগ এখন এই এলাকায়। সেখানে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাদের তুমুল লড়াই চলছে। রুশ সেনাদের গোলা নিক্ষেপ ও বিমান থেকে ফেলা বোমায় অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপর দিকে রুশ বাহিনীর পথ আটকাতে সেতু উড়িয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা।

রুশ বাহিনীর হামলার মুখে ইরপিন শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। গতকাল শহর ত্যাগের পথে এক নারী ও তাঁর দুই শিশুসন্তান মর্টার হামলায় নিহত হয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে। শহর থেকে বেরোনোর প্রধান মাধ্যম ট্রেন। কিন্তু রুশ সেনারা রেললাইনের একটি অংশ উড়িয়ে দিয়েছেন বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইরপিনের কাছের দুই ছোট শহর হোস্টোমেল ও বুচাতেও রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাদের লড়াই চলছে।

রুশ সেনারা ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ এবং সুমি অঞ্চলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, রুশ বাহিনী এখন বন্দরনগরী ওডেসায় গোলা নিক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, রুশ সেনারা ইউক্রেনকে কৃষ্ণসাগর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দক্ষিণাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

এদিকে রুশ বাহিনীর ঘেরাওয়ের মধ্যে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় মারিউপোলের পাশাপাশি সুমি অঞ্চল মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সুমি অঞ্চলের দুই শহর ওখতিরকা ও ত্রোস্তিয়ানেতস পানি ও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।

রাশিয়ায় যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ, গ্রেফতার ৪ হাজার তিনশ’

দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধবিরতি বিফল

টানা কয়েক দিনের ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মারিউপোল থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে গতকালও সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। তবে স্থানীয় সময় দুপুরে তা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কার্যকর হয়নি। আগের দিন মারিউপোল ও পাশের ভলনোভাখা শহর থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই তা ভেস্তে যায়।

ইউক্রেনে রুশ হামলায় ৩৬৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ। যদিও ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, এই সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। আর হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে ১৫ লাখের বেশি মানুষ পাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে।

এদিকে গতকাল রাশিয়ার অন্তত ২১টি শহরে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র:prothomalo

Leave a Reply