রাশিয়া আগ্রাসন শুরুর তৃতীয় দিন পেরিয়ে রাত নেমেছে ইউক্রেইনে। রাজধানী কিয়েভে জারি করা হয়েছে কারফিউ
শনিবার সারাদিনই কিয়েভের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যুদ্ধ আর বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। পূর্ব ইউরোপের এ দেশটির দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তরের প্রধান শহরগুলোতেও চলছে লড়াই।রুশ বাহিনী বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরুর পর শুক্রবার বিকালের দিকেই তাদের অগ্রবর্তী দলটি কিয়েভের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। রাজধানী বাঁচাতে সাধারণ নাগরিকদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় ইউক্রেইন সরকার
কিয়েভের দখল নিতে শুক্রবার রাতের মত শনিবার রাতেও রাশিয়ার একের পর এক হামলা চলবে বলে ধরে নিয়েছেন ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, ইউক্রেইনের সেনাবাহিনী রুশ আক্রমণ প্রতিহত করে চললেও রাশিয়ার ‘অন্তর্ঘাতী গ্রুপ’ ঢুকে পড়েছে রাজধানীর ভেতরে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিৎসকো শনিবার বিকাল ৫টা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি করে বলেছেন, এর মধ্যে বিনা অনুমোদনে কাউকে রাস্তায় দেখা গেলে তাকে রুশ নাশকতাকারী বলে ধরে নেওয়া হবে।
নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা: সেবার সঙ্গে চাকরির নিশ্চয়তা
ইউক্রেইনের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলায় এ পর্যন্ত ১৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে এক হাজারের বেশি মানুষ। হতাহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
আর জাতিসংঘের ধারণা, প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ ইউক্রেইন ছেড়ে গেছে। মলদোভা সীমান্তে নারী ও শিশুসহ শরণার্থীদের ২৭ ঘণ্টার বেশি সময় দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকার খবর আসছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, শনিবারও কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে রাশিয়া। এর মধ্যে একটি আঘাত হেনেছে একটি আবাসিক ভবনে।
রুশ সৈন্যদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে ইউক্রেইনের সৈন্যদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা অস্ত্র হাতে অবস্থান নিয়েছে কিয়েভের প্রান্তসীমায়। তারা এখনও কিয়েভ এবং প্রধান শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে বলে এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার জেলেনস্কিকে ইউক্রেইন থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে খবর দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো।প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশের মানুষ এখনও লড়ছে। সেজন্য দরকার অস্ত্র আর গোলাবারুদ। তিনি কোথাও যাচ্ছেন না।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ইন্টারফ্যাক্স লিখেছে, ইউক্রেইনের দক্ষিণে মারিওপোল বন্দরের কাছে মেলিতোপল শহর দখলে নিয়েছে রুশ সেনারা। উত্তর-পূর্বের খারকিভ এবং দক্ষিণের খেরসন শহরও দখল নিতে চাইছে তারা।
এদিকে চেচনিয়ার নেতা রামজান কাদিরভ তার যোদ্ধাদের ইউক্রেইনে পাঠানোর কথা বলেছেন, যাতে তারা রুশ সেনাদের পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দিতে পারে।
চেচেন বাহিনী ইউক্রেইনের একটি সামরিক স্থাপনা সফলভাবে দখল করেছে বলেও এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ এই মিত্র।
রাশিয়া শুক্রবারই ফেইসবুকে ঢোকার সুযোগ সীমিত করেছিল। শনিবার রুশ ব্যবহারকারীদের জন্য টুইটারে ঢোকার সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, রুশ বাহিনী এ পর্যন্ত আড়াইশর বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইউক্রেইনের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে। এর মধ্যে কয়েকটি বেসামরিক স্থাপনাতেও আঘাত করেছে।
তবে আগ্রাসী রুশ বাহিনী প্রথম দুদিন যতটা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিল, তৃতীয় দিনে তাদের গাতি সাময়িকভাবে কিছুটা কমে এসেছে বলে পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ভাষ্য। এর কারণ হিসেবে রসদ সরবরাহে ধীর গতি এবং ইউক্রেইনের প্রবল প্রতিরোধের কথা বলছেন তারা।
নার্সিং ভর্তি গাইড Pdf Download – নিউরন নার্সিং ভর্তি গাইড
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা দপ্তর এক টুইটে জানিয়েছে, রুশ বাহিনী এখন বড় শহরগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে। তার বদলে তাদের সৈন্যরা চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে শহরগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চাইছে।
এখন যারা রাজধানী কিয়েভে হামলা করছে, তারা রুশ বাহিনীর অগ্রবর্তী ‘স্যাবোটাজ গ্রুপ’ এবং সংখ্যায় কম বলেই যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাদের ধারণা। তারা বলছেন, রাজধানী কিয়েভ দখল করাই এখন রুশ বাহিনীর মূল লক্ষ্য।প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও একই কথা বলেছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছে, রাশিয়া রাতারাতি তাকে পাকড়াও করে পছন্দের নেতাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তবে সেই পরিকল্পনা ‘নস্যাত’ করে দিয়েছে ইউক্রেইনের বাহিনী।
জেলেনস্কির পোস্ট করা আরেকটি ভিডিওতে তাকে কিয়েভের রাস্তায় হাঁটতেও দেখা গেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
ইউক্রেইনের সেনাবাহিনীর বলেছে, কিয়েভের প্রধান সিটি এভিনিউ থেকে শনিবার তারা রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে। একটি সেনা ঘাঁটিতে রুশ সৈন্যরা আক্রমণের চেষ্টা করলে তারা প্রতিহত করেছে। কৃষ্ণ সাগরের শহর মাইকোলাইভে থেকেও রুশ সেনাদের সরিয়ে দিয়েছে তারা।
ওই ভিভিওতে তিনি বলেন, “অনলাইনে প্রচুর ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে। আমি নাকি আমাদের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র নামিয়ে রেখে চলে যেতে বলেছি।
কিয়েভের কাছে রুশ সেনাবাহী একটি উড়োজাহাজ গুলি করে ভূপাতিত করারও দাবি করেছে ইউক্রেইন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ওই উড়োজাহাজে রাশিয়ার ছত্রী সেনারা ছিল, তাদের বেশিরভাগই মারা গেছে।“শুনুন, আমি এখানে আছি। আমরা আমাদের অস্ত্র নামিয়ে রাখছি না। আমরা আমাদের দেশকে রক্ষা করবো, কারণ আমাদের সত্যই আমাদের অস্ত্র। আর সত্য হচ্ছে, এটি আমাদের ভূমি, আমাদের দেশ, আমাদের সন্তান।
“আমরা এর সবই রক্ষা করবো। এটাই আমি আপনাদের বলতে চাই। ইউক্রেইনের জন্য গর্বিত।”
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেইনের প্রতি সমর্থন এবং সহায়তার প্রতিশ্রুতিও বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী জেমস হেপি বলেছেন, আরও ২৫টি দেশি ইউক্রেইনকে মানবিক ও সামরিক অস্ত্র সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে।
জার্মানি ঘোষণা দিয়েছে, ইউক্রেইনে এক হাজার ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র এবং পাঁচশ ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাবে তারা।
তাছাড়া জার্মানির তৈরি সমরাস্ত্র ইউক্রেইনে না পাঠানোর যে শর্ত এতদিন অন্যান্য দেশের ওপর ছিল, তাও তুলে দিয়েছে দেশটির সরকার।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস বলেছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে, ভ্লাদিমির পুতিনের দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিজেদের সর্বশক্তি নিয়ে ইউক্রেইনের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সমর্থন করা আমাদের দায়িত্ব।”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার উপর নতুন করে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তার আওতায় রাশিয়ার জাহাজটি আটকে দেওয়া হয়।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব এনেছিল যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া সেই প্রস্তাবে ভিটো দিয়েছে। তাদের মিত্র চীন, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ভোটদানে বিরত ছিল।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আবারও রুশ সেনাদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক টুইটে তিনি বলেছেন, “জাতিসংঘের জন্ম হয়েছিল যুদ্ধের অবসান ঘটাতে। সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। কিন্তু আমাদের হাল ছাড়লে চলবে না। শান্তিকে আমাদের আরেকটি সুযোগ দিতে হবে।”